ঢাকা, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
Sharenews24

ফেব্রিক্স ঘোষণার আড়ালে কনটেইনার ভর্তি বিদেশি মদ এনেছে সিনহা গ্রুপ

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৬ ০৯:৩৮:০৬
ফেব্রিক্স ঘোষণার আড়ালে কনটেইনার ভর্তি বিদেশি মদ এনেছে সিনহা গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেব্রিক্স আমদানির মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে কনটেইনার ভর্তি বিদেশি মদ এনেছে সিনহা গ্রুপ। এই অভিযোগে ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। মিথ্যা ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানটি ১১ হাজার ৬৭৬ লিটার বিদেশি মদ আমদানি করেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে সিনহা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান বলেছেন, ঋণের জন্য এক বছর ধরে তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কারা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে মদের চালান এনেছে, তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চিঠি দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিনহা গ্রুপের আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ হাসান। তিনি বলেন, ফেব্রিক্স ঘোষণায় এক কনটেইনার বিদেশি মদ আমদানি করেছিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি। এই ক্ষেত্রে দায়ীদের শনাক্ত করতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে ফৌজদারি মামলার জন্য সুপারিশ করে। পরে কমিশনার স্যারের নির্দেশে আমি এজাহার দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিনহা গ্রুপের সুপ্রিম স্মার্টওয়্যার লিমিটেড চীনের জিয়াংশু হাই হোপ ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন থেকে ১০০ শতাংশ রপ্তানিকারক পোশাক শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ফেব্রিক্স ঘোষণায় এক কনটেইনার পণ্য আমদানি করে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরে আমদানিকারকের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হাফিজ ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড থেকে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অসত্য ঘোষণায় মদের চালান থাকার বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে চালানের সংশ্লিষ্ট কনটেইনার বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ফোর্সড কিপ ডাউন করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। কনটেইনারে তখন বোতলে বোতলে বেরিয়ে আসে জ্যাক ড্যানিয়েল, পাসপোর্ট স্কচ, সিভাস রিগ্যাল, ব্ল্যাক লেবেলসহ স্বনামধন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১ হাজার ৬৭৬ লিটার মদ। এ ক্ষেত্রে অসত্য ঘোষণায় মদ আমদানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে লেখা হয় মামলার এজাহারে।

সুপ্রিম স্মার্টওয়্যার লিমিটেড নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠান। ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের পণ্য আমদানিতে মানতে হয় বিশেষ কিছু নিয়মও। তথ্য বলছে, সুপ্রিম স্মার্টওয়্যার এক বছর ধরে বন্ধ। তাদের আইডি-পাসওয়ার্ডের অপব্যবহার হয়ে থাকতে পরে বলেও জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম স্মার্টওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান সিনহা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমার ফ্যাক্টরি ঋণের দায়ে এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এক বছর আগে আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা পণ্য নিয়ে এসেছি। আর সেই কাপড় দিয়ে পণ্য তৈরি করে রপ্তানিও করেছি। এক বছর আগে ব্যবহার করা আইপি কীভাবে নতুনভাবে ব্যবহার হলো, সেটি বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, এমনিতেই আমরা নানা ধরনের ঝামেলায় রয়েছি। এর মধ্যে আমাদের নাম ব্যবহার করে এই ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করারও দাবি করেন তিনি।

কাস্টম হাউসের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আটলান্টিক ইন্টারন্যাশনালে সরেজমিন সরবরাহ আদেশ (ডিও) ও দলিলাদির কপি সংগ্রহ করা হয়। শিপিং এজেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। এই তিনজন হচ্ছেন রাজীব ওরফে আরাফ হোসেন রাজু, রিপন ও মিজানুর রহমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই তিনজন জালিয়াতির মাধ্যমে দলিলাদি বানিয়ে শিপিং এজেন্ট আটলান্টিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য চালানটি খালাসের অপচেষ্টা করেন। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই তিন ব্যক্তি আলোচ্য পণ্য চালানটি খালাসের অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে বলে জানায় তদন্ত দল।

পণ্য চালানটি খালাস গ্রহণের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হাফিজ ট্রেডিংয়ের প্রতিনিধি কর্তৃক শিপিং এজেন্টের কাছে দাখিলকৃত দলিলাদি যাচাই করা হয়। যাচাইয়ে দেখা যায়, শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক ইন্টারন্যাশনালের কাছে দাখিলকৃত পরিচয়পত্রটি নকল। দাখিলকৃত পরিচয়পত্রে যার ছবি রয়েছে, তার নাম আশরাফ হোসেন রাজু। জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলারও সুপারিশ করে তদন্ত দল।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে