ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
Sharenews24

ব্যাংকে ফিরছে অলস অর্থ, বাড়ছে আমানতের পরিমাণ

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৬:১৫:৩২
ব্যাংকে ফিরছে অলস অর্থ, বাড়ছে আমানতের পরিমাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশের বাণিজ্যি ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায়। আগস্টে এসে আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকায়।

ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছন, ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন আমানত ও সুদের হারের মধ্যে ৯-৬ স্তরের সিলিং প্রচলিত ছিল। গত বছরের জুলাইয়ে সেটি তুলে দেওয়া হলে সুদহার বেড়ে যায়। এতে আমানতকারীরা বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন সুদের হার বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা আসে চলতি বছরের মে মাসে। এর ফলে সুদহার আগের তুলনায় আরও বেড়ে যায়। আমানতকারীরাও সেটি লুফে নেন। অনেকেই এই উচ্চ সুদের মুনাফা ভাগিয়ে নিতে ঘরে ফেলে রাখা অলস অর্থের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে জমা করা টাকাও মেয়াদ ফুরানোর আগেই তুলে নিয়ে ব্যাংকে জমা রাখতে শুরু করেন। এর প্রভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবৃদ্ধিও।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ব্যাংক মূলত সুদের ব্যবসা করে। বিষয়টি ভেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাজারভিত্তিক করার নির্দেশ দেয়; যার ফলে ব্যাংক বেশি রেটে আমানত সংগ্রহ করতে পারছে। এতে ব্যাংকের আমানত বাড়ছে।

গত বছরের জুলাই মাসে নীতি সুদহারের ভিত্তিতে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদহার চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন নীতি সুদহার ছিল ৬ টাকা ৫০ পয়সা। তার সঙ্গে করিডর হিসেবে ৩ টাকা যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ টাকা ৫০ পয়সায়।

ওই মাসে এক বছরের কম মেয়াদের আমানতে সুদহার ছিল ৬ টাকা ৫৬ পয়সা। আর এক বছরের বেশি এবং ৩ বছরের কম আমানতের সুদের হার ৬ টাকা ৭১ পয়সা এবং ৩ বছরের বেশি মেয়াদি আমানতে সুদহার ছিল ৭ টাকা ৬২ পয়সা। ওই বছরের নভেম্বরে নীতি সুদহার আরও বাড়িয়ে ৭ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়। এর ফলে তখন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি আমানতের সুদহার বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭ টাকা ১৩ পয়সা, ৭ টাকা ২২ পয়সা এবং ৭ টাকা ৬৯ পয়সা।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সেই নীতি সুদহার দাঁড়ায় ৮ টাকায়। তখন আমানতের সুদহার বেড়ে হয় যথাক্রমে ৭ টাকা ৪৩ পয়সা, ৭ টাকা ২২ পয়সা এবং ৭ টাকা ৯৫ পয়সা।

এই বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণের চাহিদা বাড়লে আমানতের চাহিদা বেড়ে যায়। এই অবস্থায় ব্যাংক উচ্চহারে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। আর বেশি সুদ পেলে আমানতকারীও ব্যাংকে টাকা রাখতে বাড়তি আগ্রহ পান। একটা সময় ব্যাংকে আমানত বেড়ে যায়; যা সম্প্রতি লক্ষ করা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে নীতি সুদহার ছিল ৮ টাকা ৫০ পয়সা। তখন করিডর ৩ শতাংশসহ সুদহার ছিল ১১ টাকা ৫০ পয়সা। তখন এক বছরে কম সময়ে আমানতের সুদহার ছিল ৮ টাকা ৪৬ পয়সা, এক বছরের বেশি এবং ৩ বছরের কম আমানতের সুদের হার ৮ টাকা ১২ পয়সা এবং ৩ বছরের বেশি আমানতে সুদহার ৮ টাকা ৩৪ পয়সা। আর ৮ মে সুদের হার বাজারভিত্তিক ঘোষণা করার সময় নীতি সুদহার ছিল ৯ টাকা। তবে সুদ বাজারভিত্তিক করার পরে ওই ৩ ধরনের আমানতের সুদহার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮ টাকা ৭২ পয়সা, ৮ টাকা ৩৯ পয়সা এবং ৮ টাকা ৬০ পয়সা।

এই বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, অনেক ব্যাংক এখন আমানত সংগ্রহে ১২ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে। আমানতের সুদহার অনেকটাই নির্ভর করে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তারল্যের ওপর।

তিনি বলেন, তবে আমানতের সুদহার অনেক বাড়লেও সেই বিবেচনায় ঋণের সুদহার খুব বেশি বাড়েনি।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে