দেশের পুঁজিবাজারের উত্থান পতন অব্যাহত থাকালেও মিউচুয়াল ফান্ডের মুনাফায় সুবাতাস দেখা দিয়েছে। ২০১৫-১৬ সমাপ্ত অর্থ বছরে এখাতের সিংহভাগ কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ব্যবসায়িক দৈন্য দশা চললেও মিউচুয়াল ফান্ডগুলো দক্ষতার মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আগের বছর একই সময়ের তুলনায় মুনাফায় ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরে ৩৫টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ৩৪টি ফান্ড। এর মধ্যে আগের বছরের তুলনায় আয় বেড়েছে ২১টি ফান্ডের, কমেছে ১৩টির ও অবসায়নের অপেক্ষায় থাকা সপ্তম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেনি।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের। আগের বছর লোকসানে থাকলেও সর্বশেষ হিসাব বছরে এর আয় ইপিইউ হয় ৩১ মার্চ সমাপ্ত হিসাব বছরে ১ টাকা ৭১ পয়সা। আগের বছর ইউনিটপ্রতি ৩২ পয়সা লোকসান ছিল ফান্ডটির। সর্বশেষ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১৩ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড দিয়েছে এ ফান্ড।
আয় বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড আগের বছর লোকসানে থাকলেও সর্বশেষ বছরে ইউনিটপ্রতি আয় ১ টাকা ৪৯ পয়সা।৩১ মার্চ সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড দিয়েছে এ ফান্ডটি। তৃতীয় স্থানে থাকা এশিয়ান টাইগার সন্ধানী গ্রোথ ফান্ডের সর্বশেষ হিসাব বছরে আয় বেড়েছে ১৭১ শতাংশ। ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে এ ফান্ডের ইপিইউ হয় ১ টাকা ৬৬ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৬১ পয়সা। সমাপ্ত বছরের জন্য ১৩ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ফান্ডটির ট্রাস্টি কমিটি।
আয় প্রবৃদ্ধির তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা ইস্টার্ন ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বশেষ বছরে ইপিইউ বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ৩০ জুন শেষ হওয়া হিসাব বছরে এর ইপিইউ হয় ৯০ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৬৩ পয়সা। সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ৯ শতাংশ রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট ঘোষণা করেছে ফান্ডটি। আর পঞ্চম স্থানে থাকা ইস্টার্ন ব্যাংক এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ডের আয় বেড়েছে ৪০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ৩০ জুন শেষ হওয়া হিসাব বছরে এর ইপিইউ হয় ৫৮ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৪১ পয়সা। ডিভিডেন্ড হিসাবে ৫ শতাংশ রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট দিচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডটি।
সর্বশেষ হিসাব বছরে আয় বৃদ্ধির তালিকায় থাকা অন্য মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে অষ্টম আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয়েছে ১৭ টাকা ৪৩ পয়সা, আগের যা ছিল ১৭ টাকা ২৬ পয়সা। ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ ৫৬ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৪৫ পয়সা। গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয় ৬১ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৪৯ পয়সা। আইসিবি সেকেন্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয় ১ টাকা ১ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৮৭ পয়সা। আইসিবি থার্ড এনআরবির ইপিইউ হয় ৬৩ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৫১ পয়সা। আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয় ৬৩ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৫৪ পয়সা। আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান; স্কিম ওয়ানের ইপিইউ হয় ৭৪ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৬২ পয়সা। আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ানের ইপিইউ হয় ১ টাকা ১৪ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১ টাকা ২ পয়সা। এনএলআই ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয় ১ টাকা ৬৯ পয়সা, আগের বছর ছিল ১ টাকা ৫০ পয়সা। ফিনিক্স ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয় ৫৬ পয়সা, আগের বছর ছিল ৫৩ পয়সা। পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয় ৭২ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৬৮ পয়সা। প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয় ৭৬ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৫৬ পয়সা। সাউথইস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ হয় ১ টাকা ৪৪ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১ টাকা ৪১ পয়সা।
অন্যদিকে আয় কমায় মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। ২০১৪-১৫ হিসাব বছরের তুলনায় সর্বশেষ হিসাব বছরে এর ইপিইউ কমেছে ৬১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে এর ইপিইউ হয় ৫৭ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১ টাকা ৪৯ পয়সা। রিলায়েন্স ওয়ানের ইপিইউ ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড দিয়েছে ফান্ডটি। ফার্স্ট জনতা মিউচুয়াল ফান্ডের আয় কমেছে ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ। এছাড়া আয় কমে যাওয়া মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে আইসিবি ফার্স্ট এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১২ দশমকি ৬২ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১২ দশমকি ৬২ শতাংশ, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এক্সিম ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল টু-এর ইপিইউ দশমিক ৯২ শতাংশ কমেছে।
নতুন ফান্ডের মধ্যে বছর শেষে এসইএমএল লেকচার ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের ইপিইউ হয়েছে ২৯ পয়সা ইপিইউ। প্রথম বছরে বিনিয়োগকারীদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড দিয়েছে ফান্ডটি।