ঢাকা, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ট্রাম্পের সময়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বড় সুযোগ তৈরি হতে পারে

২০২৪ নভেম্বর ০৭ ১৮:৫৫:৩৮
ট্রাম্পের সময়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বড় সুযোগ তৈরি হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা।

এর কারণ হিসাবে তারা বলছেন, চীনের প্রতি ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হতে পারে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের মতে, বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রতি মার্কিন বাণিজ্য নীতি আগামী বছরগুলোতে দেশের পোশাক শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির বৃহত্তম একক রপ্তানি গন্তব্য হওয়ায় এই নীতি পরিবর্তন চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক উৎপাদনকারী বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, রিপাবলিকান ট্রাম্প চীনা আমদানির উপর খাড়া শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। তার এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে পারে।

এছাড়া, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সঙ্ঘাত-সংঘর্ষে জড়াতে অনীহার কথাও বলেছেন। যা বৃহত্তর বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংঘর্ষে মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততা কমাতে পারে। এর জেরে বিভিন্ন সংঘাত-সংঘর্ষে বিগত কয়েক বছর ধরে অস্থির হয়ে থাকা বিশ্বে স্থিতিশীলতা ফিরতে পারে, যা বিশ্বজুড়ে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনভয় টেক্সটাইলসের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প মূলত ব্যবসাবান্ধব মানুষ হিসেবে সুপরিচিত। তবে চীনের ব্যাপারে তার কঠোর অবস্থানের কারণে ক্রেতারা চীন থেকে অন্য দেশে অর্ডার স্থানান্তরে উৎসাহী হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশ এই সুযোগটি নিতে পারে। ট্রাম্পের আগের মেয়াদে কিছু রপ্তানি আদেশ কিন্তু বাংলাদেশে সরে আসতে হতে শুরু করেছিল।’

কুতুবুদ্দিন আরও বলেন, ট্রাম্পকে অন্যদের তুলনায় কঠোর মনে হলেও তিনি সামরিক সংঘর্ষে না জড়িয়ে মূলত ব্যবসার ওপরই মনোযোগ দেন বেশি।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য সুযোগ ও ঝুঁকি—উভয় পথই খুলে গেছে।

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদের সুযোগ বেশি। কারণ, চীন থেকে আমদানির বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে। ট্রাম্প যদি চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে চড়া শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা বিকল্প উৎস খুঁজতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিতে পারবে, বিশেষ করে পোশাক খাতে।’

অর্থনীতিবিদ মাসরুর রিয়াজ আরেকটি সম্ভাবনার কথা বলেন—চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক এড়াতে বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র খোঁজা চীনা প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আসতে পারে বাংলাদেশে।

তিনি বলেন. ‘আর এর অর্থ হচ্ছে, তারা বাংলাদেশের মতো প্রমাণিত উৎপাদন হাবগুলোতে উৎপাদন কারখানা স্থাপন করতে চাইবে—যাতে এসব দেশের লেবেলে সেখান থেকে উৎপাদন ও রপ্তানি করা যায়।’

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ট্রাম্পের নীতিমালা বাংলাদেশের জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের একটি মিশ্রণ হয়ে আসতে পারে। চীনের প্রতি তার কঠোর অবস্থানের কারণে রপ্তানি আদেশ চীন থেকে অন্যান্য সরবরাহকারীদের কাছে সরে যেতে পারে। এতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো লাভবান হতে পারে। এছাড়া ট্রাম্পের সামরিক সংঘাত এড়িয়ে চলার প্রবণতা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।’

মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ট্রাম্পের আগের মেয়াদে তার প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যে মন্থরতা তৈরির পেছনে অবদান রাখে। এছাড়া ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস বাংলাদেশ নেতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখেছে।

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে