ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
Sharenews24

পশুর হাটে একমাত্র নারী ব্যাপারী স্নাতকোত্তর সালমা

২০২৪ জুন ১৫ ১৮:৫৮:০২
পশুর হাটে একমাত্র নারী ব্যাপারী স্নাতকোত্তর সালমা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে পশুর হাট। তবে সব জায়গার হাটের চেয়েও একটু ভিন্ন রকম দেখা গেছে চট্টগ্রামের বিবিরহাট পশুর বাজার। কোরবানি যত ঘনিয়ে আসছে বাজারটিতে বাড়ছে তত ব্যস্ততা। চলছে দাম নিয়ে হাঁকডাক, দর কষাকষি। কারও যেন কথা বলার ফুরসত নেই।

এর মধ্যে চোখ আটকে যায় এক নারী বিক্রেতার দিকে। তিনি পরম মমতায় গরুগুলোকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, আর দরদাম করছেন ক্রেতাদের সঙ্গে। শত শত পুরুষ বিক্রেতার মধ্যে তিনি একমাত্র নারী বিক্রেতা। নাম সালমা খাতুন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে এসেছেন প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরত্বের বিবিরহাটে।

বৃহস্পতিবার এই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ মানুষের ভিড় বেশি। বেচাকেনাও হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যাপারীরা। এর মধ্যে দেখা যায়- হাটে আনা গরুর পরিচর্যা করছেন সালমা। নানা উপাদানে তৈরি করছেন গরুর খাবার। আবার গরুর যত্নআত্তির জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন কর্মচারীদেরও।

এর পাশাপাশি গরু কিনতে আসা ক্রেতাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন হাসি মুখে। দম ফেলার যেন সময় নেই তার। এবার ১৪টি গরু নিয়ে বিবিরহাটে এসেছেন তিনি। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে কথা হয় সালমা খাতুনের সঙ্গে।

নারী বিক্রেতা হিসেবে কোরবানির হাটে কোনো প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সালমা খাতুন বলেন, কিছু সমস্যা তো থাকেই। এগুলোকে আমি গায়ে মাখি না। সব জায়গায় এমন টুকটাক সমস্যা থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এতদূরে গরু নিয়ে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে গরুর দাম ভালো পাওয়া যায়। তাই এসেছি। আমাদের এলাকার আরো লোকজন এসেছে। আশা করছি- সবগুলো গরু বিক্রি করে ফিরতে পারব। তবে খামারি হওয়ার পথ মসৃণ ছিল না চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার ফতেপুর গ্রামের মেয়ে সালমার। কথা কথায় উঠে আসে সেই অনুপ্রেরণাদায়ী গল্পও।

তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক করেছেন। রাজশাহী কলেজ থেকে করেছেন স্নাতকোত্তর। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। কিন্তু করোনা মহামারি সেই চাকরিও কেড়ে নেয়। সঙ্গে ছিল নানা পারিবারিক টানাপোড়েনও। আর দশজন ছেলে-মেয়ের মতো স্নাতকোত্তর পাস করে গতানুগতিক পেশার প্রতি ছুঁটেননি সালমা। বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন পথ।

জমানো টাকায় কিনেন ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী। শুরুতে দুধ বিক্রি করতেন। গাভীটি এক বছর লালনপালন করতে গিয়ে গরুর প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। এরপর এক-দুটি করে কিনতে থাকেন গরু। বাড়ির পাশেই গড়ে তোলেন মরিয়ম এগ্রো। তার খামারে এখন গরুর সংখ্যা ২০টি।

চাকরির পেছনে না ছুটে চাইলে নারীরাও উদ্যোক্তা হতে পারেন বলে মনে করেন সাহসী এই নারী। তিনি বলেন, গ্রামে দেখবেন প্রতিটি ঘরে কয়েকটি গরু লালনপালন করা হয়। তা অধিকাংশ দেখভাল করেন নারীরা। তাই চাইলে নারীরাও খামারি হতে পারে।

তিনি বলেন, কিছু বাধা বিপত্তি সব পেশাতেই আছে। এখানেও তাই। সফলতা পেতে হলে তো কষ্ট করতে হবে। তবুও দিনশেষে আপনি তো কারও চাকরি করছেন না। স্বাধীন মানুষ।

সালমা খাতুন বলেন, সত্যি বলতে এই পেশায় থিতু হতে চেয়েছি তেমন নই। মাঝে মাঝে মনে হয়েছিল ছেড়ে দেই। কিন্তু এই প্রাণিগুলোর প্রতি মমত্ববোধ করি। তাদের মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি। এই যে লালনপালনের পর গরু বিক্রি করি, টাকা পাই। কিন্তু গরুগুলো যখন ক্রেতার হাতে তুলে দেই তখন খুব কষ্ট হয়। আসলে আমার পক্ষে এখন আর গরু লালনপালন ছাড়া অন্য কিছু করা সম্ভব নয়। আমি বাকি জীবন এদের নিয়েই কাটাতে চাই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, আমার এলাকার বিবিরহাটে একজন বোন গরু নিয়ে এসেছেন। এটি আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার।

তিনি বলেন, বাজার সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছি- যেন ওনাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন। তিনি যেন কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন। নারী হিসেবে যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি না হন, সেটি আমরা দেখভাল করছি। সিটি করপোরেশনের আরও নয়টি হাট রয়েছে। অন্য কোথাও নারী বিক্রেতা আছে বলে শুনিনি।

মোর্শেদ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে