ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
Sharenews24

ওজন করে কোরবানির পশু বিক্রি করা নিয়ে ইসলাম কী বলে

২০২৪ জুন ১৫ ২০:১৫:৫২
ওজন করে কোরবানির পশু বিক্রি করা নিয়ে ইসলাম কী বলে

ওজন করে কোরবানির পশু বিক্রি করা নিয়ে ইসলাম কী বলে

বিশেষ প্রতিবেদন : পাঁচ-দশ বছর আগেও আমাদের দেশের মানুষ ওজন করে কোরবানির বিষয়ে চিন্তা করেনি। কিন্তু ইদানিং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকয় ওজন করে কোরবানির পশু কেনাবেচা হয়। এতে মানুষের আগ্রহ যেমন বাড়ছে, তেমনি এর পরিধিও সম্প্রসারিত হচ্ছে।

যেহেতু বাজারে ঘুরে ন্যায্য মূল্যে পশু কেনার অভিজ্ঞতা সবার নেই,আবার ঝামেলাও অনেক; তাই অনেকে এই পদ্ধতিকেই সহজ বলে মনে করছেন। আস্ত পশুকে বিশেষ পাল্লায় মেপে কেজি দরে মূল্য পরিশোধ করেন ক্রেতারা। পশু ক্রয়-বিক্রয়ের এই পদ্ধতির সঙ্গে বাংলাদেশে মানুষের পরিচয় বেশি দিনের না থাকায় অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে, এভাবে ওজন করে কোরবানির পশু কেনা কি জায়েজ?

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ বিন বাজ (রহ.) বলেন, ‘যেসব প্রাণীর বেচাকেনা বৈধ যেমন—গরু, ছাগল, উট, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া—এসব ওজন করে বেচাকেনা করলে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো অসুবিধা আছে বলে মনে করি না। কেননা, আল্লাহ তাআলা ব্যাপকভাবে ব্যবসাকে হালাল বলেছেন এবং সুদকে হারাম সাব্যস্ত করেছেন। এ ছাড়া এখানে পণ্যে ও মূল্যে কোনো অস্পষ্টতা বা ধোঁকার বিষয় নেই।’ (ফাতাওয়াল বুয়ু ফিল ইসলাম, পৃ: ৪০)

পাকিস্তানের বিখ্যাত ফতোয়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘আজকাল বিভিন্ন জায়গায় ওজন করে পশু বেচাকেনার প্রচলন দেখা যায়। এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় সাধারণত ভোক্তাদের মধ্যে ঝগড়ার কারণ হয় না।

অতএব, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে শর্ত হলো, বেচাকেনা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে। পাশাপাশি টাকা পয়সা বা গোশত ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বিনিময় প্রদান করবে। (অর্থাৎ, জীবিত গরুকে গোশতের বিনিময়ে বিক্রয় করা যাবে না।) ওজন করে কেনা পশু দিয়ে কোরবানি আদায় করলে কোরবানি হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো, ওজন করে কেনার সময় গোশত পাওয়াটাই একমাত্র উদ্দেশ্য না হতে হবে। বরং মুখ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।’ (ফতোয়া নং: ১৪৪৩১০১০০৫১৮)

হালাল পণ্যের বেচাকেনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইসলামে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-- ক্রেতা-বিক্রেতা প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হওয়া, ইজাব (পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের প্রস্তাব) ও কবুল (প্রস্তাব গ্রহণ) থাকতে হবে, বিক্রিত পণ্য ও বিনিময় মাধ্যম ইসলামের দৃষ্টিতে স্বীকৃতি হতে হবে, যে পণ্যটি বিক্রয় করতে চাচ্ছে, তা উপস্থিত থাকতে হবে, পণ্য ও বিনিময় মাধ্যম সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান ও এগুলো নির্দিষ্ট থাকতে হবে অর্থাৎ কী বেচাকেনা করছেন এবং তার বিনিময় মাধ্যম কী হবে তা পরিস্কার থাকতে হবে, পণ্যটি বিক্রেতার মালিকানাধীন হতে হবে, যে জিনিসটি বেচাকেনা হচ্ছে, ক্রেতা তা নিজের কব্জায় নেওয়ার উপযোগী হতে হবে, ইজাব-কবুল এক বৈঠকে হতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

পাশাপাশি কেউ যদি সেই শর্ত মেনে বেচাকেনা করে তাহলে বেচাকেনা শুদ্ধ হয়ে যাবে। নিম্নে বেচাকেনার শর্তগুলো তুলে ধরা হলো—

লেনদেনে কারো ক্ষতি করা যাবে না

রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং অন্যের ক্ষতি করা কোনোটিই উচিত নয়।(ইবনে মাজাহ, ২৩৪১)

ধোঁকা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া যাবে না

বেশি দামে পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। পণ্যের কোনো ত্রুটি গোপন করে কোনো ভাবেই ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়া যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, কোনো একসময় রাসুলুল্লাহ (সা.) (বাজারে) একটি খাদ্যশস্যের স্তূপ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজের হাতকে স্তূপের মধ্যে প্রবেশ করালেন।

তিনি তাঁর হাতে ভিজা অনুভব করেন। স্তূপের মালিককে তিনি প্রশ্ন করেন, এ কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এটা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ভেজাগুলো স্তূপের উপরে রাখলে না কেন, যাতে লোকেরা দেখতে পেত? অতঃপর তিনি বলেন, প্রতারণাকারী ও ধোঁকাবাজকারীদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩১৫)

ওজনে কারচুপি করা যাবে না

ক্রেতাকে ওজনের দিক থেকে প্রতারণার করার বহু সুক্ষ্ম পদ্ধতি রয়েছে, ওজনে কম দেওয়ার উদ্দেশ্যে এধরনের কোনো পদ্ধতিই অবলম্বন করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য।

যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। (সুরা মুতাফফিফীন, আয়াত : ১-৩)

পারস্পরিক সম্মতিতে বিক্রি হতে হবে

রাসুল (সা.) বলেন, সাবধান কারো সম্পদ তার মনোতুষ্টি ছাড়া অন্যের জন্য হালাল হবে না। (বায়হাকি)

গোশত পাওয়াই উদ্দেশ্য হতে পারবে না

লাইভ ওয়েট স্কেলে কোরবানির উপযুক্ত পশু বিক্রিতে যদি উল্লিখিত শর্তগুলোর পাশাপাশি গোশত পাওয়াই উদ্দেশ্য না হয়ে বরং আল্লাহর জন্যই কোরবানি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সে বেচাকেনাকে নাজায়েজ বলার সুযোগ নেই।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে