ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
Sharenews24

আমিরাত প্রবাসীদের স্মার্টকার্ড জালিয়াতি, দুজনের নামে মামলা

২০২৪ জুন ২০ ০৯:০৬:১৫
আমিরাত প্রবাসীদের স্মার্টকার্ড জালিয়াতি, দুজনের নামে মামলা

প্রবাস ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে যেসব কর্মী কাজ করতে বিদেশে যান, তাঁদের বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোয় (বিএমইটি) নিবন্ধিত হতে হয়।

নিবন্ধিত হওয়ার পর বিএমইটি থেকে কর্মীদের দেওয়া হয় স্মার্ট কার্ড। এই স্মার্ট কার্ড প্রদর্শন করেই কর্মীরা বিদেশে বৈধভাবে কাজ করেন।

কর্মী নিবন্ধন এবং স্মার্ট কার্ড সংগ্রহের কাজটি করে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দুই বছরে ছয়টি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং বিএমইটির দুজন কর্মকর্তা মিলে প্রায় চার হাজার স্মার্ট কার্ড জালিয়াতি করেছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী পাঠাতে এই জালিয়াতি করা হয়েছে। এই বিষয়ে গত ১১ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে মামলা করে। দুদকের মামলা সূত্রে স্মার্ট কার্ড জালিয়াতির চিত্র উঠে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কর্মীদের স্মার্ট কার্ডের জন্য শুরুতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নেয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে ওই অনুমতির কপি পাঠানো হয় বিএমইটিতে। এরপর বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারে কর্মীদের সব ডাটা এন্ট্রি করা হয়।

এই ডাটা কর্মীর ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে মিললে বিএমইটি থেকে কর্মীদের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো সংশোধন, সংযোজন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা শুধু আইটি শাখার সিস্টেম অ্যানালিস্ট করতে পারেন। অন্য কারো এ বিষয়ে কিছু করার এখতিয়ার নেই।

দুদকের মামলা

গত ১১ জুন স্মার্ট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে বিএমইটির সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলাটি করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রণজিৎ কুমার কর্মকার।

যাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে তারা হলেন- বিএমইটির তৎকালীন সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. সাইদুল ইসলাম ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম।

তবে এই দুজনের কেউ বর্তমানে বিএমইটিতে দায়িত্বরত নন। মো. সাইদুল ইসলাম বর্তমানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর মো. সাইফুল ইসলাম বর্তমানে বরিশাল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত।

দুদকের মামলায় বলা হয়, অসৎ ও লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়োগ অনুমোদনের অতিরিক্ত ডাটা দিয়ে পরস্পরের যোগসাজশে ওই দুই কর্মকর্তা তিন হাজার ৯৭৮টি অতিরিক্ত স্মার্ট কার্ড ইস্যু করেন। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী পাঠানোর দায়িত্ব পাওয়া এজেন্সিকে দেওয়া বহির্গমন ছাড়পত্রের সংখ্যার সঙ্গে বিএমইটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা ছাড়পত্রের সংখ্যার গরমিল দেখা যায়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, এসব সংখ্যার বেশির ভাগ সম্পাদনা করে কমানো বা মুছে ফেলা হয়। এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কর্মী নিয়োগের যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছিল, ওই সংখ্যা ঠিক রাখা হয়।

এজাহারে আরো বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই হাজার ৯৬০ জন কর্মী পাঠাতে আটটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১২ মে পর্যন্ত সময়ের অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

কিন্তু বিএমইটির সফটওয়্যার থেকে ওই আটটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে ছয় হাজার ৯৩৮টি স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। অর্থাৎ অনুমোদনের বাইরে অতিরিক্ত তিন হাজার ৯৭৮টি স্মার্ট কার্ড বিএমইটি থেকে অবৈধভাবে ইস্যু করা হয়।

ওই দুই বছর বিএমইটির ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের দায়িত্ব পালন করেন সাইদুল ইসলাম। বিএমইটির নিয়ম অনুযায়ী ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে তিনি ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ করার কথা নয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি অফিস সহকারী সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে জালিয়াতি করেন।

এর আগে ২০২২ সালে বিএমইটি স্মার্ট কার্ড জালিয়াতির তদন্ত করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জালিয়াতি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের ভুয়া স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতি ছাড়াই রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালরা ভুয়া স্মার্ট কার্ডে কর্মীদের বিদেশ পাঠিয়েছে। এই তদন্তে বিএমইটির দুই কর্মকর্তা এবং ছয় রিক্রুটিং এজেন্সির জালিয়াতি প্রমাণিত হয়। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো হলো মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-২৮৬), হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরএল-৪৫২), ডালাস ওভারসিজ (আরএল-৫৩২), আল মোবাররক ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৫৪২), এম আক্তার অ্যান্ড সন্স (আরএল-১২৮৪) এবং আল ফাত্তাহ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৫০১)।

জালিয়াতির একই চিত্র ফুটে ওঠে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও। তবে এই বিষয়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে