ঢাকা, বুধবার, ১ মে, ২০২৪
Sharenews24

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খান পরীমণি

২০২৪ এপ্রিল ১৮ ০৭:০৭:১৭
সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খান পরীমণি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আলোচিত অভিনেত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) এই মামলার প্রতিবেদন গ্রহণ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত পরীমনি ও তার পোশাক ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদি জিমি ওরফে জিমের বিরুদ্ধে বাদীকে মারধর ও ভয় দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

তবে আরেক আসামি ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে যা যা বলা হয়েছে

জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমের সাথে পূর্ব পরিচয়ের কারণে এই মামলার প্রত্যক্ষদর্শী তুহিন সিদ্দিকী অমি মাঝে মাঝে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।

২০২১ সালের ৮ জুন পরীমণির অনুরোধে অমিসহ তারা চারজন অমির কালো রঙের জিপগাড়িতে করে রাত ১২টা ২২ মিনিটে ঢাকা বোট ক্লাবে আসেন। গাড়ির পেছনে পরীমণির সাদা রঙের খালি জিপগাড়ি বোট ক্লাবে প্রবেশ করে।

ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় যাওয়ার পর পরীমনি ও ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি বারের সামনের টয়লেট ব্যবহার করে বারে ঢুকে টিভির সামনের টেবিলে বসেন। সাক্ষী অমিও টেবিলে বসল।

সৌজন্যের খাতিরে অমি তাদেরকে স্ন্যাক্স-জাতীয় খাবার নিজ খরচে পরিবেশন করে আপ্যায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরীমণি একটি এক লিটারের ব্লু-লেবেল মদের বোতল অর্ডার করেন।

পরীমণি ও তার সঙ্গে থাকা জিম ও বনি নিমেষেই সেই বোতলের অ্যালকোহল পান করে বোতল খালি করে ফেলেন এবং অনুরূপ আরেকটি বোতলের অর্ডার করেন। তারা ওই বোতলের আংশিক মদ পান করেন।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

আড্ডার একপর্যায়ে অমি দেখতে পান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাছির উদ্দিন মাহমুদ, তাদের পেছনে দুই-তিনটে টেবিলে বসে আছেন আরও দুইজন। এরপর অমি পরীমনিকে নিয়ে গিয়ে নাছির উদ্দিন মাহমুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং আবার তাদের টেবিলে বসে মদ খেয়ে আড্ডা করতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর ড্রিঙ্কস শেষে পরীমণি ওয়েটারকে আরও এক লিটারের তিনটি ব্লু লেবেল মদের বোতলসহ দুই বোতল ওয়াইন পার্সেল দেওয়ার জন্য অর্ডার করেন।

ওয়েটার তখন পরীমণিকে দুই বোতল ওয়াইন পার্সেল দিলেও ব্লু লেবেল মদের বোতল স্টকে না থাকায় পার্সেল দিতে পারেননি। কিন্তু পরীমণি জোর করে ওই বোতল নিতে চান এবং টেবিলে হট্টগোল করতে থাকেন।

তখন পরীমণি বনিকে থাপ্পড় মেরে বলেন, ‘আমাকে দেখে কি মাতাল মনে হয়?’ পরীমণির সঙ্গে থাকা জিম তাকে শান্ত করতে গেলে তাকেও পরীমণি থাপ্পড় মারেন।

একপর্যায়ে পরীমণি খুবই উত্তেজিত হয়ে টেবিলের ওপর থাকা গ্লাস, অ্যাশট্রে, বোতল ফ্লোরে এদিক-ওদিক ছুড়তে থাকেন। তখন নাছির মাহমুদ ক্লাবের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পরীমণিকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এতে পরীমণি আরও খেপে গিয়ে একটি অ্যাশট্রে নিয়ে তার দিকে ছুড়ে মারেন, যা তার ডান কানের ওপরে মাথায় লাগে। তখন জিম তেড়ে এসে বাদী নাছির মাহমুদকে গালমন্দ করতে করতে দু-তিনটা কিলঘুষি মারেন।

এরপর আবারও পরীমণি বারের ভেতরে যত্রতত্র গ্লাস ছুড়ে ভাঙচুর করতে থাকেন। একটি গ্লাস নাছির মাহমুদের বুকে লাগলে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। তখন নাছির মাহমুদ বোট ক্লাব ত্যাগ করে চলে যান।

মদের বিল না দিয়েই চলে যান পরীমণি

ক্লাবে তাদের খাওয়া দুই বোতল ব্লু লেবেলের দাম ও পার্সেলে নেওয়া দুই বোতল ওয়াইনের দাম পরিশোধ না করেই তারা ক্লাব থেকে চলে যান। এই চারটি বোতলের দাম ৮৭ হাজার ৬৫০ টাকা।

এ ছাড়া ক্লাবের বারের ভেতরে গ্লাস, অ্যাশট্রে, বোতল ভাঙচুর করায় আনুমানিক ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।

এই বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন বলেন, মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর থেকে সচেতনতার সঙ্গে কাজ করেছি।

তিনি বলেন, বাদীর অভিযোগের বিষয়ে নিবিড় তদন্ত করে এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছি। ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী আছে, মেডিক্যাল রিপোর্ট আছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে পরীমণিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন।

এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন পরীমণির সহযোগী ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ও জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিম।

শেয়ারনিউজ, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

বিনোদন এর সর্বশেষ খবর

বিনোদন - এর সব খবর



রে