ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
Sharenews24

পর্তুগালে স্বদেশীদের কারসাজিতে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় বাংলাদেশিরা

২০২৪ মে ২১ ২২:৫১:০৪
পর্তুগালে স্বদেশীদের কারসাজিতে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় বাংলাদেশিরা

প্রবাস ডেস্ক : ইউরোপ নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দামি দালানকোঠা আর রঙিন প্রাসাদে ঘেরা শহর। রঙিন এই রাজপ্রাসাদের গল্পের পেছনে রয়েছে হাজার হাজার বাংলাদেশির হৃদয়বিদারক কাহিনি আর স্বপ্নভঙ্গ।

দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের আইবেরিয়ান উপদ্বীপের আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত পাহার সবুজে মিশ্রিত একটি দেশ পর্তুগাল। যেখানে রয়েছে ৩০ হাজারের বেশি বাঙালি।

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এশিয়াসহ ইউরোপের অনেক দেশ থেকে অনেকই বৈধ থেকে অবৈধ হওয়ার জন্য নানাভাবে পর্তুগালে আসেন। এর কারণ পর্তুগালের সহজ অভিবাসন নীতি। দেশটির এমন অভিবাসন নীতির কারণে প্রচুর বাঙ্গালীরাও পাড়ি জমায় এখানে।

এখানে প্রশ্ন হচ্ছে এতোসব ইউরোপিয়ান দেশ থাকতে নানা ভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ পর্তুগালে ভিড় জমান কেনো? এর সহজ উত্তর হচ্ছে পর্তুগালে সরকারি নিয়ম মেনে ১০ থেকে ২৪টি সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন বা ট্যাক্স দিয়ে সহজেই রেসিডেন্ট কার্ড পাওয়া যায় ।

পর্তুগালে চাকুরিজীবীদের বেতনের একটি অংশ সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন হিসেবে সোশ্যাল সিকিউরিটিতে জমা করতে হয়। এই কন্ট্রিবিউশনের পরিমাণ ৩৪ শতাংশ। তবে ২৩ শতাংশ নিয়োগকর্তাকে প্রদান করতে হয় এবং চাকরিজীবীকে তার বেতনের ১১ শতাংশ প্রদান করতে হয়।

অন্যদিকে পর্তুগালে বেতন অনেক কম এবং বাসস্থান সমস্যার কারণে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন, এর মধ্যে সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন বা ট্যাক্স সমস্যা তো লেগেই আছে। এর মধ্যে প্রতি মাসে মূল বেতনের ১১ শতাংশসহ সর্বমোট ৩৪ শতাংশ ট্যাক্স প্রদান করতে হয়।

এর পুরো প্রক্রিয়াটির সবকিছুই করে থাকেন নিয়োগকর্তা। কিন্তু সমস্যা হলো কিছু নিয়োগকর্তা ফুল সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশনের ৩৪ শতাংশ দেয়ার কথা থাকলেও তা প্রদান করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র বলছে একাধিক বাংলাদেশী নিয়োগকর্তা রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। মো. সিয়াম (ছদ্মনাম) এবং সোহাগ (ছদ্মনাম) এক বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডে।

কিন্তু বৈধ কাগজ পত্রের জটিলতার কারণে নেদারল্যান্ড থেকে বেড়িয়ে যেতে হয় তাদের। পরে সেখান থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হওয়া সিয়াম এক বাংলাদেশির সহায়তায় অবৈধ থেকে বৈধ হতে চলে যান পর্তুগালে। সেখানে অবৈধ থেকে বৈধ হওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন বা ট্যাক্স দেয়া। সিয়ামের কোনো কাজ না থাকায় ওই বাংলাদেশির কথায় বাধ্য হয় নিজে টাকা দিয়ে ট্যাক্স চালানোর। কিন্তু ওই বাংলাদেশি তার কাছ থেকে সম্পূর্ণ টাকা নিলেও সম্পূর্ণ সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন বা ট্যাক্স জমা দেননি তিনি।

এদিকে সিয়াম, সোহাগ কোনোভাবেই বুঝতে পারেননি যে তার নিজ দেশের মানুষের দ্বারাই প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। দীর্ঘ ছয় মাস পর সিয়াম সোশ্যাল অফিসে গিয়ে চেক করে দেখেন যে ছয় মাসে তার মাত্র হাফ ট্যাক্স করে ছয়টি ট্যাক্স দিয়েছেন ওই বাংলাদেশি। যেখানে তাকে বলা হয়েছিল ফুল ট্যাক্স প্রদান করা হবে এবং সিয়াম সেই পরিমাণ টাকাই তাকে প্রদান করেছেন।

এমন সিয়াম, সোহাগ, শাহরিয়ার মতো অনেক বাংলাদেশীর একই অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশি নিয়োগকর্তা বা মালিকদের বিরুদ্ধে। আর এসব কারণেই আটকে আছে বাংলাদেশীদের সেই সোনার হরিণ টিআরসি কার্ড।

কারণ সরকারকে ফুল ট্যাক্স প্রদান না করলে কখনোই টিআরসি কার্ড প্রদান করবেনা কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতারকদের খপ্পরে ট্যাক্স কারসাজিতে আটকা পড়ে আছে অনেক বাংলাদেশীদের ভাগ্য।

অনুসন্ধান বলছে সবচেয়ে বেশি ট্যাক্সসহ প্রতারণা করে থাকে এগ্রিকালচার ফার্মের মালিকেরা। আর লিসবনের পার্শ্ববর্তী জেলা বেজার ভিলা নবা দা মিলফন্টেসে এসব ফার্মের সংখ্যাই বেশি।

যেখানে চাকুরিজীবীদের ফুল সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন তো দূরের কথা স্বাস্থ্যসেবার জন্য ইনস্যুরেন্সের টাকা নেয়া হলেও তাদের স্বাস্থ্যসেবার কোন ব্যবস্থা থাকে না।

উপরন্তু প্রতিমাসে ২০ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫০০ টাকা নেয়া হয়ে থাকে প্রতিটি কর্মচারীর কাছ থেকে, কিন্তু কখনো তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় না।

পর্তুগালে বসবাস করা সকল বাংলাদেশীদের দাবি, অচিরেই যেনো এ সকল অন্যায়ের শাস্তির ব্যাবস্থা নেন বাঙালি কমিউনিটির নেতারা।

আর তা না হলে সিয়ামের মতো হাজারো বাঙালির স্বপ্নভঙ্গ হবে বিদেশের মাটিতে।

শেয়ারনিউজ, ২১ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে