ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
Sharenews24

ইউরোপে মানবপাচারের নতুন রুট নেপাল

২০২৪ এপ্রিল ২৩ ০৬:৫২:৪৬
ইউরোপে মানবপাচারের নতুন রুট নেপাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : নেপালে ভ্রমণ করার জন্য আগে থেকে ভিসা নিতে হয় না। অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে দেশটিতে ভ্রমণ করা যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউরোপে মানবাপাচারের নতুন রুট হিসেবে নেপালকে ব্যবহার করছে পাচারকারী একাধিক চক্র।

সম্প্রতি এই প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কাঠমুন্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সংক্রান্ত একটি চিঠির প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে মানবপাচারের এই রুট বন্ধ ও মানবপাচারকারীদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একটি সংঘবদ্ধ দালালচক্রের কাছে বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হবার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশের কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলে সক্রিয় এই সংঘবদ্ধ চক্রটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভিসা দেওয়ার নাম করে টুরিস্ট হিসেবে নেপালে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের আটকে রেখে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে বন্দি করে রাখার ঘটনাও ঘটছে। বন্দি অবস্থায় ভিকটিমদের নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ও করে তারা।

এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ইতোমধ্যে বৈঠকও করেছে। ওই বৈঠকে সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ-সচিব (বহিরাগমন-১) জানান, গত বছরের ১৪ ও ২৮ নভেম্বর দুই দফায় ১১ জন বাংলাদেশিকে রোমানিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কাঠমুন্ডুতে নেওয়া হয়। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে দালালচক্রের সদস্যরা অগ্রীম ৫ লাখ টাকা করে নেয়।

পরে তাদেরকে একটি হোটেলে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি ও নির্যাতন করে আরও ৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয় পাচারকারীরা। জোবায়ের নামে এক ব্যক্তি এই চক্রের মূল হোতা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় ভিসা সংগ্রহ করে ইউরোপে যাওয়া সম্ভব হলেও পরিণামে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এটা দেশের ভাবমূর্তির জন্যও অবমাননাকর। নেপালে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য একধরনের লোক আসে, যারা পরবর্তীকালে আফ্রিকা হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে।’

তিনি বলেন, ‘দালালচক্রের সদস্যরা ভিসা প্রত্যাশীদের ট্যুরিস্ট ভিসায় নেপালে আনার পর ৩-৪ মাস আটকে রাখে। পরবর্তী সময়ে ৫-৭ লাখ টাকা খরচ করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু এজেন্সির যোগসাজশে তাদের ক্রোয়েশিয়ায় পাঠায়। সেখানে কাজ করার সুযোগ সীমিত হওয়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে চাকরি প্রত্যাশীরা। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবেশাধিকার খর্ব হচ্ছে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহানারা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় দালালচক্রের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিরীহ নাগরিকদের পাচারের অপচেষ্টা ও ঝুঁকির বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও নেপালসহ অন্যান্য দেশে অবৈধ অভিবাসনের সঙ্গে জড়িত দালালচক্রকে দ্রুত গ্রেফতার এবং তাদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জরুরি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সভায় একইসঙ্গে নেপালে ভ্রমণকারী সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশ্য ও ডকুমেন্টস সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ইমিগ্রেশন বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এজন্য সাধারণ যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্যও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, এদিকে নেপালকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতাদের শনাক্ত করতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা ট্রাভেল ভিসায় নেপাল যাচ্ছেন তাদের ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ইউরোপে মানব পাচার চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে মানুষ পাচার করে আসছে। নেপাল ছাড়াও দুবাই ভ্রমণ ভিসায় লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে নিয়মিত পাচার হয়। এসব চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় গ্রেফতারও হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে মানব পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না।

শেয়ারনিউজ, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে