ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪
Sharenews24

গুলশানের ফ্ল্যাটে চলতো মাদক কারবার, জানতেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই

২০২৪ এপ্রিল ২৮ ২৩:২০:৩৫
গুলশানের ফ্ল্যাটে চলতো মাদক কারবার, জানতেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর গুলশানের ক্লাবপাড়ায় অবৈধ ক্যাসিনোতে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও শেয়াবাজারে তালিকাভুক্ত অলিম্পিক ইন্ডাষ্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের দুটি বাসায় অভিযান চালিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদসহ নবীন মণ্ডল ও পারভেজকে আটক করা হয়। এরপর তাদের হেফাজত থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মদ উদ্ধার করে পুলিশ।

মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। যে দুটি ফ্ল্যাটে মদ উদ্ধার করা হয়েছে তার মালিকানা জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

চিঠির জবাবে সিটি করপোরেশন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্ল্যাট দুটির মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। গ্রেফতারকৃত দুই আসামি আরও জানান, ফ্ল্যাটের মালিক মাদক ব্যবসার বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন।

২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশানের গুলশান-১ এর রোড-২৮ বাসা নম্বর-৫২, ফ্ল্যাট নম্বর-এ-১ ও গুলশান-২ এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/বি বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

গ্রেফতাররা হলেন- রাজবাড়ী সদরের দুর্গাপুরের মৃত জাবেদ মন্ডলের ছেলে মো. নবীন মন্ডল (৪৮) ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মীর মো. জাহেদুল হকের ছেলে মো. পারভেজ (২৪)। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক এস.এম সামসুল কবীর গুলশান থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

বেশিরভাগ সময় ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ থাকত। কখনও বিশেষ করে বিকেল-সন্ধ্যায় কখনও অভিযুক্ত নবীন মণ্ডল, কখনও পারভেজ বিভিন্ন লোক নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে আসত এবং গভীর রাত পর্যন্ত সেখানেই থাকত।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে গুলশানের একটি বাড়িতে বিপুল পরিমাণ মদ মজুদ করে একটি চক্র মাদক ব্যবসা করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ২৭ অক্টোবর, ২০১৯ সালে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।

এদিকে, বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদসহ দুই অভিযুক্ত নবীন মণ্ডল ও পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মদ উদ্ধার করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, ডিএমপি গুলশান থানাধীন তাদের বাড়ির ঠিকানার আরেকটি ফ্ল্যাটে বিপুল পরিমাণ মদ ও সিসা মজুত রয়েছে। তাদের দেখাশোনাও করেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে আটক করে ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।

মামলাটির তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। চার্জশিটে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, যে ফ্ল্যাটে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে সেটি মালিকের অনুপস্থিতিতে অভিযুক্ত নবীন মণ্ডল ও পারভেজ দেখাশোনা করতেন। বেশিরভাগ সময় ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ থাকত।

কখনও বিশেষ করে বিকেল ও সন্ধ্যায় কখনও অভিযুক্ত নবীন মণ্ডল আবার কখনও পারভেজ বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে আসত এবং গভীর রাত পর্যন্ত সেখানেই থাকত।

যে দুটি ফ্ল্যাটে মদ উদ্ধার করা হয়েছে তার মালিকানা প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এক প্রতিবেদনে বলেছে, ফ্ল্যাট দুটির মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। গ্রেফতারকৃত দুই আসামি আরও জানান, ফ্ল্যাটের মালিক মাদক ব্যবসার বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা মামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তারা আরও জানান, ফ্ল্যাটের মালিক মাদক ব্যবসার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। এরপর মদ উদ্ধার করা দুটি ফ্ল্যাটের মালিকানা জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেন তদন্ত কর্মকর্তা।

চিঠির জবাবে সিটি করপোরেশন একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রাপ্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, ফ্ল্যাট দুটির মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। উল্লেখ্য, আজিজ মোহাম্মদ ভাই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত একজন আসামি।

এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় গত বছরের ১২ নভেম্বর আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছি।

মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাই পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সর্বশেষ বিদেশ ভ্রমণের তথ্য পান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। জানা গেছে, ২০১০ সালের ১১ মার্চ তিনি থাইল্যান্ডে গিয়ে দেশে ফিরে আসেননি।

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে একসময় অভিনেতা সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও তদন্তে কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে অভিনেতা সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটের আসামি তিনি।

শেয়ারনিউজ, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে