ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪
Sharenews24

ধর্ষণের পর প্রবাসীর শিশু মেয়েকে হত্যা, বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন র‌্যাব কর্মকর্তা

২০২৪ মে ০২ ০৯:৪১:৫৪
ধর্ষণের পর প্রবাসীর শিশু মেয়েকে হত্যা, বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন র‌্যাব কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীর শিশু ছাত্রী তাজরিন সুলতানা ঝুমুর বয়স মাত্র ৯ বছর। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় ঝুমুর। খুনের ঘটনায় ধর্ষক ও ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক জানিয়েছে ধর্ষণের সময় শিশুটি চিৎকার করায় তাকে গলা ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় শিশুটি বাড়ি ফেরার পথে আগ থেকেই ওঁৎ পেতে ছিল ওই ধর্ষক।

বুধবার (০১ মে) র‌্যাবের কুমিল্লা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন র‍্যাব-১১, সিপিসি-২ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা।

এই সময় ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা। সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান অর্ণবসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাব জানায়, গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব-১১ এর বিশেষ অভিযানে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ফেরুয়া বাজার এলাকা থেকে ধর্ষক ও হত্যাকারী মফিজুল ইসলাম ওরফে মফুকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়।

মফিজুল ইসলা মফু কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার খিলপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি একজন মাদকসেবী বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, ভিকটিমের বাবা সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী এবং তার মা একজন গৃহিণী।

শিশু ঝুমুর স্থানীয় সোনালি শিশু শিক্ষা বিদ্যানিকেতন কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছিল। গ্রীষ্মের তাপদাহের কারণে শিশুটির স্কুল সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত।

যেদিন ঘটনা ঘটে, সেদিন শিশুটি স্কুল থেকে সকাল ১১টার দিকেও বাড়ি ফিরে না আসায় তার মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর মেয়ের সহপাঠীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ঝুমুর স্কুল শেষে বাড়ি চলে গেছে।

শিশু ঝুমুরের মা দিশাহারা হয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে এক ব্যক্তি ভিকটিমের মাকে তার মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানান।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনৈক ব্যক্তি ভিকটিমের মাসহ অন্যান্য লোকজনদের জানায়, আসামি মফিজুল ইসলাম মফুকে ঘটনার দিন সকাল আনুমানিক ১১টার সময় ঘটনাস্থলের রাস্তার পাশে থাকা বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে দ্রুত রাস্তায় ওঠে আসতে দেখেছেন। এরপর শিশুটির মা ওইদিন রাতেই মফুকে একমাত্র আসামি করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানায়, নিহত ভিকটিম আসামির প্রতিবেশীর মেয়ে এবং পূর্ব পরিচিত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসামি মফিজুল তার অসৎ কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে ওইদিন সকাল পৌনে ১১টায় ঘটনাস্থলের পাশের রাস্তায় ভিকটিমের আসার অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকে।

শিশু ঝুমুর স্কুল থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছালে আসামি ভিকটিমকে কৌশলে রাস্তার পাশের ধানী জমিতে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

একপর্যায়ে শিশুটি চিৎকার করলে আসামি মফিজুল ভিকটিমের মুখ ও গলা চেপে ধরে। এতে ভিকটিম শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

মাদকসেবী মফিজুল ভিকটিমের কোনো নড়াচড়া দেখতে না পেয়ে ভিকটিমের কানে থাকা দুল ছিঁড়ে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর চাঁদপুরের শাহারাস্তির এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপনে চলে যায় সে।

র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। থানা পুলিশ তাকে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করেছেন।

প্রসঙ্গত, নিহত শিশু তানজিম সুলতানা ঝুমুর (৯) উপজেলার গলিয়ারা উত্তর ইউনিয়নের খিলপাড়া গ্রামের প্রবাসী জাকির হোসেনের একমাত্র মেয়ে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা উত্তর ইউনিয়নের খেয়াইশ (খিলপাড়া) এলাকার একটি ধানের জমি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশে পড়ে ছিল বইখাতাসহ স্কুলব্যাগ ও পোশাক।

শেয়ারনিউজ, ০২ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে