ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪
Sharenews24

বাংলাদেশ ব্যাংকের অবক্ষয়ের কথা শুনলে কষ্ট লাগে : ড. ফরাসউদ্দিন

২০২৪ মে ০২ ২৩:২৩:১৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের অবক্ষয়ের কথা শুনলে কষ্ট লাগে : ড. ফরাসউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘অবক্ষয়’ হয়েছে- এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অবক্ষয়ের কথা শুনি তখন কষ্ট লাগে। অনেক কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। অনিয়ম হচ্ছে, কিন্তু অনিয়মের ব্যাপারে ভূমিকা নিতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার (০২ মে) রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘কনভারসেশন উইথ ইআরএফ’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাবেক এই গভর্নর।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ঋণখেলাপি, কর খেলাপি এবং অর্থপাচার একই সূত্রে গাথা। ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণে ব্যাংকে অর্থের টান পড়েছে। এই কারণে ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে অর্থ সরবরাহ করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি কমছে না। শক্ত হাতে খেলাপি ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। বিষয়গুলো নীতি নির্ধারকদের বোঝানোর মতো একটা লোক প্রয়োজন, ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন দরকার।

অর্থপাচারের বিষয়ে সাবেক গভর্নর বলেন, কেন যেন অর্থপাচারের ব্যাপারে সরকার নীরব। তাদের তালিকা প্রকাশে সংসদে আলোচনা হয়। কিন্তু প্রকাশ করা হয় না। পাচার নিয়ে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) নীরব। এটা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, খেলাপি ওয়ালারা যদি অনেক বড় হয়ে যায়, তাহলে সমস্যাও বড় হয়। মাত্র ১০ হাজার টাকার কৃষি ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে কৃষককে জেলে যেতে হয়। কিন্তু ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হলে তাকে সালাম ঠুকা হয়, পাশে বসিয়ে চা খাওয়ানো হয়, এটা হতে পারে না। খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ঋণগুলো অবশ্যই আদায় করা উচিত।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ধনী-গরিবের বৈষম্য আগেও ছিল। এখন ধনী-গরিবের মধ্যে অর্থের পার্থক্য আগের তুলনায় বেড়েছে। বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। একটি দাতা মুরুব্বির পরামর্শে সরকার ৯২ সালে স্বল্পমেয়াদী আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটাই ব্যাংকের বড় সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানের অনেক পথ রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের সার্বিক সমস্যার সমাধানে ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।

সাবেক এই গভর্নর বলেন, দেশে ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন- ‘ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে।’ আমি এটা মনে করি না। ব্যাংকের সংখ্যা কোনো সমস্যা নয়, মূল সমস্যা ব্যাংকগুলোর শাখা। আমানত এবং ঋণ বিতরণে ব্যাংকের শাখাগুলো রাজধানী কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেমন ব্যাংক অনুমোদন দেয়, তেমনি শাখা খোলারও অনুমতি দেয়। আমাদের একটি ব্যাংকের শাখা ১৫ হাজার লোকের সেবা দিয়ে থাকে। ভারত ও পাকিস্তানে ১২ হাজার লোক সেবা পান। জনসংখ্যা অনুপাতে আরও ব্যাংকের শাখা হতে পারে। তবে আমানত ও ঋণ বিতরণ সুষম বণ্টন করতে হবে। বাস্তবে দেখা যায়, আমানত ও ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে মতিঝিলে ৮০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে, আর বাকি ২০ শতাংশ গ্রাম-বাংলায়।

ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ দরকার আছে কি না সেটা বলতে হবে। একীভূতকরণ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। তবে এক ব্যাংকের সঙ্গে অন্য ব্যাংকে জোর করে একীভূত করে খারাপ ব্যাংককে ভালো করা যাবে না। একীভূত বা টেকওভার হতে পারে। তবে কোনো কিছুই জোর করা ঠিক না। যে দুটি ব্যাংককে একীভূত করা হবে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। আমাদের উৎকণ্ঠা হলো ‘ব্যাংক বন্ধ হলে বোধ হয় আমানতের টাকা পাওয়া যাবে না।’ এইটা ঠিক না, এমনটা হয় না। অনেক দেশেই ব্যাংক বন্ধ হচ্ছে, চীনেও হচ্ছে। এখন ব্যাংকে টাকা আসার দরকার। এজন্য আমানতের ক্ষেত্রে যত প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করতে হবে।

শেয়ারনিউজ, ০২ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে