ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
Sharenews24

সুন্দরবনে ২৪ বছরে ২৪ বার আগুন! কেন?

২০২৪ মে ০৬ ২১:৪৩:২১
সুন্দরবনে ২৪ বছরে ২৪ বার আগুন! কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৪ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে বিস্তীর্ণ বনভূমির গাছপালাসহ বিভিন্ন লতা-গুল্ম। এতে তিলে তিলে নিঃশেষ হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে আগলে রাখা এই বন। বার বার আগুনে পোড়ে সুন্দরবন। আগুনের এত ঘটনা কেন এই বনে?

সুন্দরবনে গত দুই যুগে ২৪ বার আগুন লাগে। এসব ঘটনায় ২৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে কোনো তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, জেলে–মৌয়ালদের ফেলে আসা আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে অন্তত ১৫ বার। সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দাবদাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৪ বার, মাছ ধরার জন্য ৪ বার, আক্রোশবশত অগ্নিসংযোগের সম্ভাবনার উল্লেখ রয়েছে ৪ বার।

স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, বন বিভাগের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে অনুর্বর বনে আগুন দিয়েছে। পরবর্তীতে বর্ষা মৌসুমে এসব স্থান প্লাবিত হলে সহজেই জাল দিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ ধরতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া, অসাধু বন কর্মকর্তা-মাছ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, আইনের ফাঁকফোকর, বনকর্মীদের অদক্ষতাসহ নানা কারণে সুন্দরবনে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, দুই যুগের এসব অগ্নিকাণ্ডের সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে সুন্দরবনের ভোলা ও মরা ভোলা নদীসংলগ্ন এলাকায়।

২০০২ সালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কটকায় একবার, একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দুবার। ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল এলাকায় দুবার, ২০০৬ সালে তেরাবেকা, আমুরবুনিয়া, খুড়াবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার।

২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলি ও ডুমুরিয়ায় তিনবার। ২০১০ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১১ সালে নাংলীতে দুবার, ২০১৪ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় তিনবার, ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলায় একবার ও ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায়।

২০২১ সালের ৩ মে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় এবং সর্বশেষ তিন দিন আগে চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুনের ঘটনা ঘটে।

সুন্দরবনের আগুন ‘মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত’ উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগ ও সরকারকে এ নিয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও বন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা’র) কেন্দ্রিয় যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারীসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৫-২৬ বার আগুন লেগে শত একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে।

মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বনকর্মর্তার যোগসাজশে এবং অদক্ষ মৌয়ালদের কারণে সুন্দরবনে বারে বারে আগুন লাগছে। এর দায়ভার বনবিভাগ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

এই বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, বন আইনে হওয়া মামলার বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতায় পার পেয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন প্রকৃত দোষীরা। ফলে পুনরায় একই অপরাধে লিপ্ত হন তারা। সুন্দরবন বাঁচাতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সব পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের অনেক নদী-খাল ভরাট হয়ে গেছে। নদী–খালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা জরুরি। একই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বনের মধ্যে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত বন্ধের বিষয়েও বন বিভাগ কাজ করছে বলে জানান শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, বনজীবীদের বিড়ি-সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশ থেকে আগুন লাগে। কখনও জেলেরা ওই এলাকায় বর্ষাকালে মাছ ধরার জন্য আগুন লাগিয়ে দেন। কখনও মৌয়ালদের মশালের অংশ থেকে আগুন লাগে। তবে এবার কীভাবে আগুন লেগেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিরূপণে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিশেষজ্ঞরা থাকবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আমির হোসেন আরও বলেন, আগামী বছর যাতে এই এলাকায় আর আগুন না লাগে সেজন্য ভোলা নদী ও দুটি খাল খনন করা হবে।

তখন ওইসব এলাকায় জোয়ারের পানি উঠতে পারে। এছাড়া বন বিভাগের অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের সচেতন করা হবে।

শেয়ারনিউজ, ০৬ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে