ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
Sharenews24

ব্যাংক খাতে এখন নীতি তৈরি হচ্ছে দুর্নীতির প্রয়োজনে

২০২৪ মে ০৫ ০৬:২৬:২৮
ব্যাংক খাতে এখন নীতি তৈরি হচ্ছে দুর্নীতির প্রয়োজনে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অর্থনৈতিক সংকট জটিল হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ব্যাংকিং খাতের। কিন্তু এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সঠিক পদক্ষেপ নেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের। বরং ব্যাংকিং খাতে কীভাবে দুর্নীতি করা যায় সেদিকে খেয়াল রেখে প্রবিধান তৈরি করা হচ্ছে।

শনিবার (০৪ মে) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা ফোরামের আয়োজনে ‘রাজনীতি অর্থনীতি: বাংলাদেশ এখন’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

দেশে সার্বিক জবাবদিহিতার পতন মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দুর্নীতি নিয়মতান্ত্রিক পর্যায়ে চলে গেছে। ধরা পড়েছে, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।

ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে দুর্নীতি বলতাম টাকা নেওয়াটা। এখন নীতি তৈরি হচ্ছে দুর্নীতির প্রয়োজনে।’

তবে শাসকগোষ্ঠী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সক্ষমতা দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এটি যাতে খাদে না পড়ে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ ধসে পড়ছিল। তারা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে তা রক্ষা করেছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অনারারি ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে অত্যন্ত জটিল আখ্যা দিয়ে বলেন, এই এক বছরে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে দুটি নতুন উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। প্রথমটি হলো দায়দেনা পরিস্থিতির ঝুঁকি। অপরটি প্রবৃদ্ধির ধারা স্লথ হয়ে যাওয়া। দায়দেনার পরিস্থিতি এখন জটিল হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে আরও বাড়বে। এটা যে শুধু রাজস্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে তা নয়; এটি বিনিময় হারের উপরও চাপ সৃষ্টি করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাবকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, নাগরিকের পরিবর্তে নতুন শ্রেণির স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, ব্যক্তি ও পরিবারের জন্ম হয়েছে। তারা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এই অনিষ্টের কারণ হলো, তাদের মোকাবেলায় যে রাজনৈতিক ক্ষমতা, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন তা অনুপস্থিত।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই পরিস্থিতির জন্য শুধু বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠী ব্যবস্থাকেই দায়ী করেননি, বরং সুশীল সমাজ, উৎপাদনশীল শ্রেণির পাশাপাশি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিকেও দায়ী করেন। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'কিভাবে মুদ্রাস্ফীতি বের করবেন? ব্যাংকিং খাতে যে সংকট, সরকার তা করতে পারছে না, একীভূত করতে যাচ্ছে না, সুদের হার ঠিক করতে পারছে না।

দলের উদ্দেশে দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আপনি যতক্ষণ না বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারবেন ততক্ষণ জনগণ আপনাদের জন্য রাস্তায় নামবে না। মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।’ বিএনপির বারবার নির্বাচন বয়কটেরও সমালোচনা করেন দেবপ্রিয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ডক্টর আসিফ নজরুল বলেন, বিরোধী দলের প্রতি জনগণের আস্থা নেই, তাই তারা রাজপথে আসে না- এটা সরকারের বক্তব্য। এটা আপনি বুঝলেন কীভাবে?

আসিফ নজরুল আরও বলেন, বিএনপি ২০২৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছে, নাকি বাধ্য করা হয়েছে।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, রাজনৈতিক অভিজাতরা এখন খুবই ছোট। তাদের আবার একজনের ওপর নির্ভর করতে হয়। যদি তার ইচ্ছার সঙ্গে কোনো অসঙ্গতি থাকে, তাহলে তাদের বের করে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা অতীতে এবং বিভিন্ন দেশে দেখেছি যখন রাজনৈতিক এলিট সংখ্যায় কমে যায় এবং শুধুমাত্র বলপ্রয়োগের ওপর নির্ভর করে। এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছে যে তা ভেঙে পড়তে পারে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে সমস্যা হচ্ছে, বুদ্ধিজীবীরা ছোটখাটো বিষয়ে অনেক কথা বলে। ব্লু ইকোনমি থেকে বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলার আসবে। কিন্তু নীল অর্থনীতিতে যে রাজনীতি আছে তা আমরা ভুলে যাই। আমরা অনেক আলোচনা করি, কিন্তু গভীর আলোচনা ছাড়াই আমরা এটাকে সহজভাবে নিই।’

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক ব্যাংকার আবু নাসের বখতিয়ার প্রমুখ।

শেয়ারনিউজ, ০৫ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে