ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪
Sharenews24

গোল্ডেন ভিসা নিয়ে কেন দেশে দেশে এত বিতর্ক

২০২৪ এপ্রিল ১৭ ১৫:৪৬:৩১
গোল্ডেন ভিসা নিয়ে কেন দেশে দেশে এত বিতর্ক

প্রবাস প্রতিবেদক : ইনভেস্টমেন্ট মাইগ্রেশন কাউন্সিলের তথ্যানুসারে, বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশ দ্রুততার সঙ্গে বসবাসের (গোল্ডেন ভিসা) ও এমনকি নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে। অর্থাৎ অন্য দেশের নাগরিকেরা বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করলে তাঁদের এই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।

দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, যেসব দেশ বিনিয়োগের বিনিময়ে বসবাস বা এমনকি নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় কর্মসূচি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের।

কিন্তু চীনের নাগরিকদের পক্ষে এই পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব পাওয়া কঠিন। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই জন্য তাঁদের অন্তত ১৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

এ ছাড়া ভানুয়াতু ও নেভিসের মতো ছোট দেশের জন্য এই বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়া বিদেশি মুদ্রা অর্জনের অন্যতম বড় উৎস।

বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি চীনের নাগরিকদের মধ্যেই। চীনের সচ্ছল ও ধনী মানুষদের মধ্যে এক ধরনের প্রবণতার জন্ম নেয়, বিদেশে গেলেই মর্যাদা বাড়ে। যে কারণে চীনের মানুষের মধ্যে অন্য দেশে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। তবে কেবল চীনের মানুষই নয়, আরও অনেক দেশের মানুষ এখন বিনিয়োগের বিনিময়ে বিদেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করছেন।পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষই দেশত্যাগ করতে চায়। এই দেশত্যাগের অনেক কারণ রয়েছে- কেউ নিপীড়ন থেকে বাঁচতে চায়, অন্যরা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে বাঁচতে চায় এবং কিছু ক্ষেত্রে বিচারের মুখোমুখি হতে চায়।

অন্যরা কেবল তাদের সন্তানদের উন্নত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বা একটি ভাল পরিবেশ এবং জলবায়ুতে কাজ করার জন্য দেশত্যাগ করে। বিনিময়ে তারা দেশে যে অর্থ পাঠায় তা ব্যক্তি ও দেশ উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, বিষয়টি বিতর্কিত।

প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, সেই দেশে কাদের বসবাসের অধিকার আছে। অর্থাৎ কারা সেখানে থাকতে পারেন আর কারা নন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে গোল্ডেন ভিসা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শেনজেন ভিসার কল্যাণে সহজেই ইউনিয়নভুক্ত বেশির ভাগ দেশে ভিসা ছাড়া চলাচল করা সম্ভব। কিন্তু ইউনিয়নভুক্ত যেসব দেশ বিনিয়োগের বিনিময়ে ভিসা ও পাসপোর্ট দেয়, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে ইউনিয়নের দীর্ঘমেয়াদি লড়াই চলছে।

ইউরোপীয় কমিশন এবং ওইসিডি, বা ধনী দেশগুলির জোটের একটি দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ হল যে গোল্ডেন ভিসা আসলে অর্থ পাচারের একটি হাতিয়ার। এই ভয় অমূলক নয়। ২০১৮ সালে, চীনা বিনিয়োগকারীরা গ্রীসে একটি প্রতারণার সাথে জড়িত ছিল।

অর্থাৎ, গ্রিসের বিকাশকারীরা বাজার মূল্যে সম্পদ কিনেছে এবং চীনের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেছে। বিকাশকারীরা তখন সেই অর্থের কিছু বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সালে গোল্ডেন পাসপোর্টে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও গোল্ডেন ভিসায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ইউনিয়নের জয় হয়েছে।

কিন্তু ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মাল্টা এখনো বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দিয়ে যাচ্ছে। ভিসার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ কঠোর হচ্ছে।

২০২৩ সালে গ্রিস বিনিয়োগের সীমা দ্বিগুণ করেছে। দেশটির বেশ কিছু লোকপ্রিয় স্থানে বিনিয়োগের বিনিময়ে বসবাসের অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিনিয়োগ সীমা ৫ লাখ ইউরোতে উন্নীত করেছে তারা।

তারপরও গ্রিসের বিরোধী দলগুলো মনে করে, এই স্কিম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কিমগুলোর অন্যতম। তারা এ সুযোগ একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে।

৮ এপ্রিল এই কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্পেন। সে দেশে ৫ লাখ ইউরোর বিনিময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের অধিবাসীদের থাকার অধিকার দেওয়া হতো। এসব স্কিমের সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেয় রাশিয়া ও চীনের ধনীরা। স্কিমগুলোর অধীনে ৯০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ সম্পত্তি খাতে গেছে।

ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে বাড়িভাড়া ও বাড়ির দাম বেড়ে গেছে। স্থানীয় মানুষেরা এর বিরোধিতা করার কারণেই স্পেন সরকার এই কর্মসূচি বাতিল করতে চলেছে।

আরও বেশ কয়েকটি দেশ এসব কর্মসূচি বাতিল করেছে, যেমন আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন। অন্যদিকে আছে অস্ট্রেলিয়া।

মূল কথা হল বিনিয়োগ অভিবাসনের বাজার সঙ্কুচিত হচ্ছে। এর অর্থনৈতিক সুবিধা রয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে সরকার ভাবছে যে এই অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি রাজনৈতিক এবং অন্যান্য খরচের চেয়ে বেশি কিনা।

এখনো টাকার বিনিময়ে অনেক দেশের ভিসা ও পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে বিত্তবানদের লাগামহীন থাকার সুযোগ কিছুটা কমেছে।

শেয়ারনিউজ, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে