ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪
Sharenews24

ফ্রান্সের মায়োতে অনিয়মিত অভিবাসনবিরোধী অভিযান

২০২৪ এপ্রিল ১৭ ১৭:৪২:৫৭
ফ্রান্সের মায়োতে অনিয়মিত অভিবাসনবিরোধী অভিযান

প্রবাস ডেস্ক : ফরাসি কর্তৃপক্ষ অপারেশন ওউমবুশু শেষ হওয়ার এক বছর পর ভারত মহাসাগরের একটি ফরাসি দ্বীপ মায়োতে নতুন অভিযান শুরু করেছে। ‘মায়োট প্লাস নেট’ নামের এই ক্যাম্পেইনটি অপরাধ, অস্বাস্থ্যকর আবাসন এবং অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালানো হবে৷

ফ্রান্সের ওভারসিজ টেরিটোরি বিষয়ক মন্ত্রী মারি গেভনো মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) এই অভিযানের ঘোষণা দেন৷ মূল ভূখণ্ডের বাইরে থাকা ফ্রান্সের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ও অঞ্চলের দেখভাল করে এই মন্ত্রণালয়৷

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে দ্বীপের মুদজু ইবন দৌজানি এলাকায় অননুমোদিত বসতি ভেঙে ফেলা শুরু করেছে প্রশাসন। এর আওতায় ইতিমধ্যেই ২০০টিরও বেশি অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর খালি করা হয়েছে।

অভিযানে ফরাসি পুলিশের গেন্ডারমেরি শাখার সাঁজোয়া যান এবং কনভয় সহ আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের একটি ভারী উপস্থিতি দেখা গেছে। দ্বীপের ডেম্বেনি এলাকা থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে

মন্ত্রী মেরি গেভনো বলেছেন, "জেন্ডারমেরি পুলিশ (মঙ্গলবার) ভোর থেকে অস্বাস্থ্যকর আবাসন, গ্যাং এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।"

তিনি আরো বলেন, “মায়োতে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে ৪০০ পুলিশ এবং জন্দারমেরি সদস্যদের জড়ো করা হয়েছে। এক হাজার ৭০০ জন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ‘মায়োত প্লাস নেট’-এ অংশগ্রহণ করবেন৷” এই অভিযান ১১ সপ্তাহ ধরে চলবে। অর্থাৎ চলতি বছরের জুনের শেষ পর্যন্ত চলবে৷

নতুন এই অভিযানের উদ্দেশ্য আগের ‘উয়ামবুশু’ অভিযানের মতোই। তবে এবার ৬০ জন গ্যাং নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে৷ সরকার এক হাজার ৩০০টি অননুমোদিত বসতি উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেছে৷

মারি গেভনো বলেন, দ্বীপের ঝোপঝাড় ব্যবহার করে এই অবৈধ বাসস্থানগুলো তৈরী করা হয়েছে৷ উয়ামবুশু ১ অভিযানের চেয়েও এই অভিযানে দ্বিগুণ সাফল্য অর্জিত হবে৷

এই উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে কর্তৃপক্ষ সমুদ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে, যাতে করে মোজাম্বিক চ্যানেল থেকে আফ্রিকান অভিবাসীরা দ্বীপে প্রবেশ করতে না পারে৷ ২০২৩ সালে মায়োতে আফ্রিকান আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল৷

তিন লাখ ১০ হাজার বাসিন্দার দ্বীপটি ফ্রান্সে দরিদ্রতম ডিপার্টমেন্টগুলোর একটি৷ দ্বীপে অবস্থানরত অভিবাসীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ পাশ্ববর্তী কমোরোস দ্বীপপুঞ্জ ও অন্যান্য আফ্রিকান অঞ্চল থেকে আগত৷ অভিবাসীদের বড় একটি অংশ মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে

অবস্থিত কমোরোস থেকে মাছ ধরার নৌকায় চড়ে দ্বীপটিতে আসেন৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অস্বাস্থ্যকর ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে বসবাস করেন৷

দ্বীপের নাগরিকত্ব আইন সংষ্কারের ঘোষণা

এই বছরের শুরু থেকে, মায়ো একটি গুরুতর সামাজিক সংকট এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা সমস্যা সমাধানের জন্য নাগরিকত্ব সম্পর্কিত দ্বীপের "ভূমির আইন" সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছেন৷

দ্বীপের অভিবাসন সংকট এবং সামাজিক নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ফ্রান্সের অভিবাসন আইনে থাকা ভূমি আইন মায়োত দ্বীপের জন্য সংষ্কার করা হবে৷’’ এজন্য সাংবিধানিক সংশোধনেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷

ভূমি আইন অনুযায়ী, ফ্রান্সে বসবাসরত দুইজন বিদেশি পিতামাতার শিশু ১৮ বছর বয়স পূরণ হলে কিছু শর্ত পূরণ করে খুব সহজেই ফ্রান্সের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন৷

ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডে এটি নিয়ে বড় জটিলতা তৈরি না হলেও সরকারের ধারণা মায়োত দ্বীপে আসা অনিয়মিত অভিবাসীরা এই আইনের কারণে দ্বীপের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন৷

এছাড়া শিশুরা নাগরিকত্ব পেলে অনিয়মিত অভিবাসী বাবা-মারাও বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারেন৷

জেরাল্ড দারমানা গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা একটি বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এটি হলো মায়োতের ভূমি আইনের সমাপ্তি৷ এর জন্য একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা হবে৷ ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট এটির জন্য পদক্ষেপ নেবেন৷

এটি স্বয়ংক্রিয় ফরাসি জাতীয়তা শুধুমাত্র তাদের জন্য সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্য যাদের পিতা-মাতা ফরাসি তবে, যদি এই ঘোষণা এবং সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় তবে এটি শুধুমাত্র মায়োট দ্বীপে প্রযোজ্য হবে।

হোম অফিসের মতে, ২০২২ সালে মেয়োতে জন্মগ্রহণকারী ৪৪ শতাংশ শিশুর অভিভাবক উভয়ই বিদেশী ছিল উপরন্তু, ৩৮ শতাংশ শিশুর অন্তত একজন ফরাসি নাগরিক রয়েছে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, "সরকার ঘোষিত নতুন ব্যবস্থা এবং সর্বশেষ অভিবাসন আইনের পারিবারিক পুনর্মিলন ধারা বাস্তবায়িত হলে মেয়োতে জারি করা আবাসিক অনুমতির সংখ্যা ৯০0 শতাংশ কমে যাবে।"

শেয়ারনিউজ, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে