ঢাকা, বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
Sharenews24

এতো প্রণোদনার পরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় কেন?

২০২৩ আগস্ট ১২ ১৪:৩৩:০২
এতো প্রণোদনার পরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় কেন?

আবদুল খালেক : ২০১০ সালের মহা ধ্বসের কারণে পুঁজি হারানোর বেদনা সইতে না পেরে যুবরাজ সহ ১৮ জন বিনিয়োগকারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অসংখ্য বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনযাপন করতে থাকেন। দেশজুড়ে শেয়ারবাজারের ধ্বস এবং বিনিয়োগকারীদের আত্মহত্যার ঘটনা চলে আসে টক অফ দি টাইমে । ঠিক সেই সময় সরকার ধ্বংসপ্রায় শেয়ারবাজারে প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং নানা প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।

সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:-

শেয়ারবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বাজারকে বিকেন্দ্রীকরণ বা ডিমিউচ্যুলাইজেসন করা। এই লক্ষ্যে ডিএসই এর ১৮০ কোটি শেয়ারের মধ্যে চীনা কনসোর্টিয়ামকে ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি শেয়ার দেয়া হয়েছে। প্রতিটি শেয়ারের বাজার মুল্য ২১ টাকা হিসাবে ডিএসই চীনের নিকট থেকে পেয়েছে ৯৪৫ কোটি টাকা। সেই সাথে চীনের চিওয়েনহাই ডিএসইর একজন আন্তর্জাতিক পরিচালক নির্বাচিত হয়েছে।

কোনো বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ হাউজ যেন এগ্রেসিভ বাই সেল করতে না পারে, তার জন্য সার্ভিলেন্স সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সিডিবিএল চার্জ কমানো হয়েছে। মার্জিন লোন নেয়া ঋণাত্বক কোডগুলোর ফোস সেল বন্ধ করা হয়েছে। ভুতুড়ে অমনিবাস একাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। লেনদেন নিস্পত্তির ফি কমানো হয়েছে। লোন কোডগুলোর সুদ মওকুফ করা হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যেন সহজেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে, তার জন্য আইন পরিবর্তন করে সহজ আইন করা হয়েছে। বিদেশে রোড শো করা সহ শেয়ারবাজারে জন্য নানা প্রনোদনা দেয়া হয়েছে।

শেয়ারবাজারকে বিদ্যমান সংকট থেকে বের করতে ৫ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রনালয়, বানিজ্য মন্ত্রনালয়,আইন মন্ত্রনালয়, এনবিআর, আইসিবি, ডিএসই সহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাজারকে স্থিতিশীল করতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা এখনও বিদ্যমান রয়েছে।

উদ্যোক্তা পরিচালকদের একক বে ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের আইন পাশ করা হয়েছে। যাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ধারণ অবস্থা স্থিতিশীল থাকে।

প্রতিটি তফসিলি ব্যাংককে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে বলা হয়েছে এবং ২৫টি ব্যাংক সেই তহবিল গঠন করে বাজারে বিনিয়োগও করেছে। শেয়ারবাজারের জন্য বিশেষ স্ট্যাবিলাইজেসন ফান্ড গঠন করা হয়েছে। মার্জিন লোনের লিমিট বাড়িয়ে ১:০.৫ থেকে ১:১ করা হয়েছে। ৪০ পিই পর্যন্ত শেয়ারে মার্জিন লোন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেটা আগে ছিল ২০ পিই পর্যন্ত।

সবশেষে দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষীত এক্সপোজার লিমিটের সমাধান করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকের বিনিয়োগ বাজার মুল্যে না ধরে ক্রয় মুল্যে হিসাব করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যাংক গুলোর বন্ডে বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটের বাহিরে রাখার বিধান করা হয়েছে। আইসিবিকে সক্রিয় করার জন্য ১৮০০ কোটি টাকার ফান্ড দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজারে পর্যাপ্ত তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক ডিলারদের দেয়া ব্যাংকের শ্রেণীবদ্ধ ঋণের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত প্রভিশন ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

একটি স্থিতিশীল শেয়ারবাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এতোসব সংস্কার করা হয়েছে। এসব সংস্কার করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে। এখন তো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় বিনিয়োগকারীদের কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। তাহলে তারা কেন বাজারে সেল প্রেসার দিচ্ছে এবং হাত গুটিয়ে বসে আছে।

শেয়ারবাজারে ক্রান্তিকালে আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ও বড় বিনিয়োগকারীরা যেন সক্রিয় হয়। বাজারের স্বাভাবিক গতি ফেরাতে তারা যেন আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসে। তার জন্য বিএসইসি-কে আরও কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।

(লেখক একজন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী)

শেয়ারনিউজ, ১২ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে