ঢাকা, সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
Sharenews24

নগর দরিদ্রের ২৩ শতাংশের নেই জাতীয় পরিচয়পত্র

২০২৩ আগস্ট ২৯ ১১:৫১:০১
নগর দরিদ্রের ২৩ শতাংশের নেই জাতীয় পরিচয়পত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করতে গিয়ে গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড.আবুল বারকাত জানান, ১৮ বা তার বেশি বয়সী নগর দরিদ্রদের ২৩ শতাংশের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, ৫২ শতাংশের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই। এক জন নাগরিক যে একটি দেশের নাগরিক তার কিছু চিহ্ন থাকে। অন্তত কাগজে কিছু থাকলে ভালো হয়। অথচ ছোটখাটো বিষয়েও দরিদ্র মানুষের অগ্রাধিকার একেবারে তলানিতে।

সোমবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশে নগর দারিদ্র্য: ভূমি, অভিবাসন, মৌল সেবা’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. শফিক উজ জামান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ ও আল আরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, নগরীর একটি দরিদ্র পরিবারের মাসিক ব্যয়ের ৫৭ শতাংশ (প্রতি মাসে ৭ হাজার ২৬৮ টাকা) খাবার কিনতে চলে যায়। যে অমানবিক পরিবেশে তারা বসবাস করে, তার ২৫ শতাংশ (প্রতি মাসে ৩,১৮৮ টাকা) গঞ্জালেসের মাথার পিছনে বাড়ি ভাড়ার দিকে যায়। ১১ শতাংশের মতো ডাক্তার-পথে যায় (মাসে ১,৪০২ টাকা)। আর মাত্র ৩ শতাংশ (মাসে ৩৮৩ টাকা) তারা শিক্ষায় ব্যয় করতে পারে।

তিনি বলেন, নগরে দরিদ্রদের জন্য কোনো সঞ্চয় নেই, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে ব্যয় কমাতে হবে। ফলে স্বাস্থ্য-দারিদ্র্য ও শিক্ষা-দারিদ্র্য বাড়ছে। তাই খাদ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মজুরিও বাড়ছে না। যে কারণে এই দারিদ্র্য বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, বস্তি অঞ্চলে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বললেই চলে। সরকারি হিসাব মতে, নগরের গড়ে ৬৫ শতাংশ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা পায়। কিন্তু নগর দরিদ্রদের মধ্যে এই হার মাত্র ১৬ শতাংশ। নিরাপদ পানিতে অভিগম্যতা দেশে শতভাগ বলা হচ্ছে, সেখানে নগর দরিদ্রদের মধ্যে এই হার মাত্র ৩৩ শতাংশ।

গবেষক দলের প্রধান বলেন, গ্রামের মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে ‘গলা ধাক্কা অভিবাসনের’ শিকার হয়। এই হার ৪৫ শতাংশ। এছাড়াও, এমন গলা ধাক্কার প্রধান প্রধান কারণ হলো কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে লাগামছাড়া খরচ বৃদ্ধি, প্রয়োজনের সময় কৃষি ঋণ না পাওয়া, উৎপাদনের ন্যায্য দাম না পাওয়া প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নগর দরিদ্র এগুলো উল্লেখ করেছেন।

এছাড়াও, নদী ভাঙন গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের একটি অন্যতম বড় নিয়ামক। বস্তি ও নিম্ন আয়ের বাসিন্দাদের কম পক্ষে ৮২ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে বলেও জানান তিনি।

বস্তিবাসীদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ যেখানেই হাত দেওয়া হয়েছে প্রতিটি স্তরেই তাদের একটি বেদনাদায়ক চিত্র ফুটে উঠেছে জানিয়ে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, গবেষণা থেকে জানা গেছে, বস্তিবাসীরা ক্রমাগত দরিদ্রায়নের মধ্যে বসবাস করছে। যে মৌলিক পাঁচটি অধিকারের কথা বলা হয় তারা তা থেকেও অনেক দূরে।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু টিকে থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি আদর্শিক ভিত্তি ছিল। দেশের প্রতিটি মানুষ সমপরিমাণ সুযোগ সুবিধা নিয়ে চলার কথা ছিল। যারা বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছেন তারা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করেন তবেই পরিবর্তন সম্ভব।’

অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান বলেন, যে নগরায়ন ও শিল্পায়নকে ভিত্তি করে দেশের উন্নয়ন হয়, দেশে সে উন্নয়ন হচ্ছে না। পোশাক শিল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে সস্তা শ্রমের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা এই শিল্পের সবকিছুর জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। সবকিছু দেশে উৎপন্ন করে এ শিল্প হলে উন্নয়ন টেকসই হতো। দেশে উন্নয়নের গুণগত ও পরিবেশগত পরিবর্তন দরকার।

ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্য, নাগরিকের মধ্যে বৈষম্য, শহর গ্রামের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে।

দেশের দরিদ্ররা বোঝা নয়, অবৈধ ধনীরাই বোঝা মন্তব্য করে শামসুল হুদা বলেন, তারা (অবৈধ ধনীরা) টাকা রোজগার করে না, দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করে টাকা বিদেশে পাঠায়। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে, তারা সব ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বেশির ভাগ বৈষম্যের শিকার হয় নারী ও শিশুরা। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বস্তিবাসীর জন্য সংবিধান লঙ্ঘিত হয়।

শেয়ারনিউজ, ২৯ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে