ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪
Sharenews24

যে অস্ত্রে পুরো দুনিয়াকে চোখ রাঙাচ্ছে ইরান

২০২৪ এপ্রিল ১৭ ১৬:৪০:০৪
যে অস্ত্রে পুরো দুনিয়াকে চোখ রাঙাচ্ছে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলি হামলার পর হরমুজ প্রণালীতে একটি ইসরায়েলি জাহাজ জব্দ করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জাহাজটি আটক করে তার জলসীমায় নিয়ে গেছে। জাহাজটি আটকের পর ইসরায়েল ইসরায়েলি ভূখণ্ডে শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

তেহরান বলছে, তারা সিরিয়ায় হামলার জবাব দেওয়া শেষ করেছে। তবে ইসরাইল পাল্টা ব্যবস্থা নিলে তেহরান চুপ থাকবে না। ইরান সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে। এমনকি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করারও হুমকি দিয়েছে দেশটি। এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ।

হরমুজ প্রণালী দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তেল রপ্তানি হয়। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ অন্যান্য স্থানে তেল যায়। হরমুজ প্রণালীর একপাশে আরব দেশগুলো। এই দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকার মিত্ররা রয়েছে। হরমুজ প্রণালীর ওপারে ইরান।

হরমুজ প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ যে অংশ সেখানে ইরান এবং ওমানের দূরত্ব মাত্র ২১ মাইল। হরমুজ প্রণালিই এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমারাদের জন্য, বলতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথ বন্ধের হুমকি দিয়ে গোটা বিশ্বকে চোখ রাঙাচ্ছে ইরান। হরমুজ প্রণালি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

বিশ্বের মোট বাণিজ্যের ৮০ শতাংশই হয় সমুদ্রপথে। ২০২১ সালে, একটি জাহাজ আটকে যাওয়ার পরে সুয়েজ খালটি ছয় দিনের জন্য বন্ধ ছিল, যার ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছিল। আর এই খালের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল মধ্যপ্রাচ্যের হরমুজ প্রণালী।

এই চ্যানেল ছাড়া পারস্য উপসাগর পার হওয়ার কোনো উপায় নেই। এই উপসাগরটি সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইরান, ইরাক এবং ওমান দ্বারা বেষ্টিত।

বিশ্বব্যাপী যে পরিমাণ জ্বলানি চাহিদা রয়েছে তার ১৫ শতাংশই মিটিয়ে থাকে উপসাগরীয় এসব দেশ। আর প্রতিদিন যে পরিমাণ জ্বালানি রপ্তানি হয় তার এক পঞ্চমাংশ তথা ২ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি হয় এ পথে।

বলা হয়ে থাকে, উপসাগরীয় অঞ্চলে পৃথিবীর মোট জীবাশ্ম জ্বালানির প্রায় অর্ধেক সঞ্চিত আছে। পারস্য উপসাগরের নিচে এবং উপসাগরীয় এসব দেশে পৃথিবীর মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশ জমা।

এসব জীবাশ্ম জ্বালানি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করতে পাড়ি দিতে হয় হরমুজ প্রণালি। আর এ প্রণালি হয়েই এসব জ্বালানি মধ্যপ্রাচ্য থেকে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছায়। যদি এই প্রণালি যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে থমকে যাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা।

পরাস্য উপসাগরের জ্বালানি ছাড়া বহু দেশের অর্থনীতিই হোচট খাবে। চীনের ৪৫ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানি আসে হরমুজ প্রণালি হয়ে, জাপানের ক্ষেত্রে এটি ৪৮ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে এটি ৩০ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র ইরান বাদে উপসাগরীয় প্রতিটি দেশই আমেরিকার দাসে পরিণত হয়েছে। তাই কোনোভাবেই তেহরানের হাতে এ প্রণালির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ দিতে চায় না ওয়াশিংটন।

এমনকি এটি উপসাগর জুড়ে অসংখ্য সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ রক্ষার জন্য পঞ্চম নৌবহর প্রতিষ্ঠা করে। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকাকে ঠেকাতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি করেছে ইরান। এমনকি প্রচুর পরিমাণে পানির খনি মজুদ করেছে।

যাতে কোনো সংঘাত ঘটলে হরমুজের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রণালী অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া যায়। ইরান বলছে, পশ্চিমা অবরোধের কারণে ইরান তেল বিক্রি করতে না পারলে উপসাগরীয় দেশগুলোর কোনোটিই পারবে না।

এমন হুমকির কারণে হয়তো আমেরিকা ইরানকে খুব একটা ক্ষেপাতে চায় না।

শেয়ারনিউজ, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে