ঢাকা, বুধবার, ২২ মে, ২০২৪
Sharenews24

সেদিন কী ঘটেছিল শিকাগোতে

২০২৪ মে ০১ ০৬:৩০:০৩
সেদিন কী ঘটেছিল শিকাগোতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ইংরেজি এবং জার্মান ভাষায় লেখা একটি লিফলেট প্রকাশিত হয় ১৩৮ বছর আগে, ১৮৮৬ সালের ৪ মে । তাতে বড় অক্ষরে লেখা- ‘ওয়ার্কিংম্যান, টু আর্মস’। লিফলেটের মাধ্যমে শ্রমিকদের শিকাগো শহরের হে মার্কেট চত্বরে জড়ো হতে বলা হয়।

তার আগের দিন ‘ম্যাককরমিক রিপার্স’ কারখানায় এক জার্মান অভিবাসী শ্রমিক নেতা অগাস্ট স্পাইস বিক্ষোভকারীদের ডাকা হরতাল ও বিক্ষোভে অসংখ্য হত্যাকান্ড দেখেন। যা দেখে তিনি দৌড়ে তার অফিসে যান এবং লিফলেট ছাপান।

বলে রাখা ভালো- স্পাইস নিজে একটি জার্মান সংবাদপত্র চালাতেন। হত্যার খবর এবং লিফলেট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ‘হে মার্কেট চত্বর’ ছিল শহরের একটি ব্যস্ত অংশ। যেখানে ছিল যাত্রীছাউনি, অসংখ্য গাড়ির দোকান এবং কাছাকাছি বেশ কয়েকটি কারখানা।

সেদিন হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল বের করে আন্দোলনত শ্রমিকরা। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দুই হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিক হে মার্কেট চত্বরে জড়ো হয়। এরপর হে মার্কেট চত্বরে শুরু হয় বক্তৃতা পর্ব। ওই সময় শেষ বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন আমেরিকার সমাজ সংস্কারক ও শ্রমিক নেতা স্যামুয়েল ফিলডেন।

যদিও দিনটি ছিল ঠান্ডার। তাপমাত্রার পারদ ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু তার উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা বাতাস ভারী করে তোলে। তাতে সমর্থন দেয় শ্রমিকেরা। রাত সাড়ে ১০টায় তার বক্তৃতা শেষ হতেই এগিয়ে আসে পুলিশ বাহিনী এবং সভাস্থল ছেড়ে সবাইকে চলে যেতে হুকুম দেয়।

এমনি এক মুহূর্তে পুলিশের এগিয়ে আসা পথে ঘরে তৈরি একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন আরও ৬৬ জন। যার মধ্যে ছয়জন পুলিশ সদস্য পরবর্তী সময়ে মারা যান। অন্যদিকে বোমা বিস্ফোরণের পর উভয়পক্ষে গুলিবিনিময় শুরু হয় বলে পুলিশ দাবি।

তবে ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময় পুলিশই শ্রমিকদের ওপর গুলি ছোড়ে এবং নিজেদের গুলিতেই তারা মারা যায়। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় হে মার্কেট চত্বর, রাস্তায় পড়ে থাকে শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ। যদিও বলা হয় এতে চারজন শ্রমিক নিহত এবং ৬০ জন আহত হন। প্রকৃত সত্য অনেকটাই আড়ালে ঢাকা পড়ে। কিন্তু আড়ালে থাকে না তথাকথিত বিচারকাজ। আন্দোলনকারী শতাধিক শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়। শুরু হয় বিচারের পালা।

বিচার শেষে জুরি বোর্ড আট প্রতিবাদীকে মৃত্যুদন্ড প্রদানের পক্ষে মত দিলেও বিচারক সাতজনকে মৃত্যুদন্ড এবং একজনকে ১৫ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। উচ্চ আদালতও একই রায় বহাল রাখে। আমেরিকার অঙ্গরাজ্য ইলিনয়ের গভর্নর রিচার্ড জেমস প্রতিবাদী শ্রমিক নেতা ফিলডেন এবং স্ত্রোয়ারের মৃত্যুদন্ড মওকুফ করে ১০ নভেম্বর ১৮৮৭ যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন।

এরপর শুরু হয় বাকি পাঁচজনের মৃত্যুর প্রহর গোনার পালা। কিন্তু এ দিনই ঘটে আরেক বিষাদময় ঘটনা। লিঞ্জ নামের এক সাজাপ্রাপ্ত বিপ্লবী শ্রমিক কৌশলে চুরুট বা মোটা সিগারেটের মতো দেখতে বিশেষ ধরনের হাতে তৈরি বোমা (ব্লাস্টিং ক্যাপ) সংগ্রহ করেন।

চুরুটের মতোই তা মুখে পুরে তিনি এতে বিস্ফোরণ ঘটান। মুহূর্তেই লিঞ্জের মুখের বিরাট অংশ আলগা হয়ে খসে পড়ে। তারপরও ছয় ঘণ্টা বেঁচে ছিলেন লিঞ্জ।

পরদিন ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর অবশিষ্ট চার বিপ্লবী শ্রমিক এঞ্জেল, ফিসার, পারসন্স এবং স্পাইসকে নেওয়া হয় ফাঁসির মঞ্চে। ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগোতে এগোতে তারা শ্রমিকদের অধিকারের কথা নিয়ে রচিত গণসংগীত ও বিপ্লবী গান গেয়ে যান।

ফাঁসিতে ঝোলানোর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে স্পাইস বলে যান, ‘এমন একদিন আসবে যেদিন আমাদের নীরবতা (মৃত্যু) তোমরা যে কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চাও, তার চেয়েও শক্তিশালী হবে।’ বৃথা যায়নি শ্রমিক নেতা স্পাইসের গর্জন।

শেয়ারনিউজ, ০১ মে২০২৪

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে