ঢাকা, বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
Sharenews24

স্বাভাবিক শেয়ারবাজারের জন্য স্টেকহোল্ডারদের জবাবদিহিতা খুবই জরুরী

২০২৩ আগস্ট ১৮ ১৫:১৭:৪৫
স্বাভাবিক শেয়ারবাজারের জন্য স্টেকহোল্ডারদের জবাবদিহিতা খুবই জরুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন গুজব ও অনিশ্চয়তায় গভীর সংকটে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। টানা ৫ কর্মদিবস বড় পতনের পর বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ালেও লেনদেন নেমে গেছে তলানিতে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৩০০ কোটির ঘরে নেমে গেছে, যা ৪ মাস ২০ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। এক মাস যাবৎ এমন লেনদেনের খরায় ধুঁকছে শেয়ারবাজার।

শেয়ারবাজারের এমন টালমাটাল অবস্থায় গত ১৬ কর্মদিবসে ৯ হাজার কোটি টাকা এবং সপ্তাহের প্রথম তিন কর্মদিবসে ৪ হাজার কোটি টাকার পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। পতনের ধাক্কায় এই সময়ে বাজার ছেড়েছেন লাখের বেশি বিনিয়োগকারী।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দার পর রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবারও আস্থার সংকটে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গেল সপ্তাহের রোববার, সোমবার ও বুধবারের পতন গুজব প্ররোচিত হলেও এক মাস ধরে বাজারে মন্দাবস্থার কারণ নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। পোর্টফোলিওতে নগদ টাকা রেখে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন তাঁরা। এর সঙ্গে চড়া মূল্যস্ফীতি মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমিয়ে বিনিয়োগ হ্রাস করেছে। এর প্রভাব সার্বিক অর্থনীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারেও পড়েছে।

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড থেকে উৎসে কর কাটা, সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের চেষ্টা, প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা, সামনে রিজার্ভ কমে যেতে পারে ইত্যাদি গুজবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার দিনের লেনদেন শুরুর আগেই ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) সরকারি-বেসরকারি ২৫ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে ভারতীয় হ্যাকাররা—এমন খবরও ছড়িয়ে পড়ে। বিনিয়োগকৃত অর্থ হ্যাকারদের দখলে চলে যেতে পারে, এই ভয়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির ধুম পড়ে, যা অব্যাহত ছিল দিনের লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত। এতে দিন শেষে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭১ হাজার ৪৩৯ কোটি ১৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, যা নতুন সপ্তাহের শুরুতে ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে দেখা যায়, চলতি মাসের ১৬ দিনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে ৯ হাজার ৮৩৯ কোটি ৪৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

গেল সপ্তাহের তিন কর্মদিবসে ডিএসইর সূচক কমেছে ৮৬ পয়েন্টের বেশি। সূচকের এমন পতনকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও শেয়ারবার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, এটা একেবারেই স্বাভাবিক বলা যায় না। স্বাভাবিক হলে ৮-১০ পয়েন্ট করে কমতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার শেয়ারবারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরপরই মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক দুটি বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বিএসইসির বৈঠকের সংবাদে বৃহস্পতিবার বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়ে লেনদেন হয়, ফলে সূচক বাড়ে। কিন্তু ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে যায়, যা গত ৪ মাস ২০ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বিদায়ী সপ্তাহে গুজবের কারণে পতন হলেও এক মাস ধরে লেনদেন খরায় পুড়ছে শেয়ারবাজার। গত ১৮ জুলাই ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকার বেশি। এরপর টানা ২১ কর্মদিবস ১ হাজার কোটি টাকা লেনদেন দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। আর গত ১০ কর্মদিবসে ধারাবাহিকভাবে লেনদেন হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার নিচে।

মন্দাবস্থার কারণে এই সময়ে বহু বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছেন। শেয়ারের জিম্মাদার প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন শেষে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৪টি। ১৬ আগস্ট সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৬টি। অর্থাৎ দেড় মাসের ব্যবধানে বিও হিসাব কমেছে বা শেয়ারবার ছেড়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৮ জন বিনিয়োগকারী।

শেয়ারবারের সার্বিক লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সংবাদ মাধ্যমকে রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ফ্লোর প্রাইস লেনদেন না হওয়ার একটা কারণ। অনেক ভালো শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। সেই ফান্ডগুলো রিলিজ হলে লেনদেন আরও বাড়ত। অন্যদিকে, সামনে নির্বাচন কেমন হবে, রাজনৈতিক কারণে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে—এসব নিয়ে মানুষ বিচলিত।

শেয়ারবারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, কিছু দুষ্টলোকের কারণে গত দু-তিন দিন সূচকের পতন হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দু-তিন দিনের ব্যাপার, শেয়ারবার ভালো হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার যখনই সংকটে পড়ে, তখন ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ এবং বড় বিনিয়োগকারীরা সাইড লাইনে চলে যায়। তারা তখন ‘ওয়েট এন্ড সি’ প্রক্রিয়া চলে যায়। তখন বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার কোনো পক্ষ এগিয়ে আসে না। যে কারণে পতন আরও গভীর হয়ে যায়।

তাঁরা বলছেন, পতন অব্যাহত থাকলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকঢোল পিটিয়ে এসব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সভা করতে থাকে। সভায় ভালো ভালো সিদ্ধান্ত হয়। স্টেকহোল্ডারদের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া যায়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তু, প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটি আর দেখা হয় না। ফলে দুই-চারদিন বাজার ইতিবাচক থাকলেও তারপর আবারও পতনের ধারাবাহিকতায় ফিরে আসে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন,স্বাভাবিক ও স্থিতিশীলশেয়ারবাজারের জন্য স্টেকহোল্ডারদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা খুবই জরুরী। এক্ষেত্রেবাণিজ্যিক ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ডিলার, ব্রোকার, তালিকাভুক্ত কোম্পানি কে কতোটা পজিটিভ/নেগেটিভ ভূমিকা পালন করছে, তার মনিটরিং রিপোর্ট থাকা জরুরী। বিএসইসি যদি স্টেকহোল্ডারদের জবাবদিহিতার জায়গাটি শক্ত করতে পারে, শক্তভাবে মনিটরিং করতে পারে, তাহলে বাজারে কখনো অস্বাভাবিক ও অস্থির আচরণ দেখা যাবে না। স্বাভাবিক নিয়মেই বাজার উঠা-নামা করবে।

শেয়ারনিউজ, ১৮ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে